
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতি শতাধিক গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সঞ্চয়ের টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ ব্যাপারে বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
ওই অভিযোগের সূত্র ধরে প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় ২০২০ সালে নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি কার্যক্রম শুরু করে। এটির ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন মাইনুদ্দিন খান জয়, সাধারণ সম্পাদক সবুজ মিয়া ও কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিকু। তারা সবাই চনপাড়ারই বাসিন্দা। এর মধ্যে জিকু চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের সোলেমান মিয়ার ছেলে।
ওই সমিতিতে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ আশপাশের এলাকার শতাধিক গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত হন। প্রথম অবস্থায় এলাকার কিছু গ্রাহককে ঋণ দেওয়া হয়। পরে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকরা এফডিআর, সঞ্চয় ও বিভিন্নভাবে সমিতিতে টাকা গচ্ছিত রাখতে শুরু করেন।
এলাকায় পরিচিত হিসেবে জিকু এসব টাকার দায়িত্ব নেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। ৫-৬ দিন আগে সমিতির অফিস তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে যান। সমিতির অফিস তালা বন্ধ দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাননি তারা।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, খেয়ে না খেয়ে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলাম সমিতিতে। সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারকরা। ভুক্তভোগী এসব গ্রাহকের দাবি, হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার ও প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বুধবার ৩০-৪০ জন গ্রাহক ইউএনও অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা সমবায়বিষয়ক কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ ভূঁইয়া বলেন, ৭০ জন গ্রাহকের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। হয়তো প্রতারণার শিকার আরো গ্রাহক থাকতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতির গ্রাহকরা বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমার কাছে লিখিতভাবে দিয়েছেন। বিষয়টি সমবায় কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চানপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র ১নং ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী শাহিন জানান, দৈনিক সঞ্চয় হিসেবে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা, এফডিআর বাবদ এককালীন ৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে ৭৩ হাজার টাকা, মায়ের কাছ থেকে এফডিআর বাবদ এককালীন ৫০ হাজার টাকা, মোট ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা এই সমিতিতে জমা করেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতারক জিকুর বাবা ভাইসহ পরিবারের লোকজন এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছে গচ্ছিত টাকা চাইতে গেলে তারা অপহরণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।
একই এলাকার আলামিন মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা বেগম সৌদি আরব প্রবাসী। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেন। তিনি জানান, মাসিক মুনাফার ভিত্তিতে এই সমিতিতে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। বিদেশে কষ্টে উপার্জিত টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।
এছাড়া চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার চৈতি আহম্মেদ মুন্নি এফডিআর বাবদ এককালীন ৫ লাখ টাকা দেন। এছাড়া দৈনিক দুটি বইয়ে ৪০০ টাকা করে দুই বছরে আড়াই লাখসহ মোট সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় তাছলিমা আক্তার এফডিআর বাবদ দিয়েছেন এককালীন আড়াই লাখ টাকা। পিঠা বিক্রেতা কদ বানু এফডিআর বাবদ দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা। গার্মেন্টস কর্মী জায়েদা খাতুন এফডিআর বাবদ দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা, প্রবাসী ময়না আক্তার এফডিআর বাবদ দেড় লাখ টাকা জমা দেন। নারগিছ আক্তার ৫০ টাকা করে সঞ্চয় করেন ১০ হাজার টাকা।