বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫

|

শ্রাবণ ২৯ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে লেকে লাশ পাওয়া কিশোর বেরিয়েছিল মায়ের ওষুধ কিনতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৪ আগস্ট ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে লেকে লাশ পাওয়া কিশোর বেরিয়েছিল মায়ের ওষুধ কিনতে

ফাইল ছবি

মায়ের ওষুধ কিনতে ৫০ টাকা হাতে নিয়ে বের হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মো. ইয়াছিন। বাসার পাশেই কয়েকটি ফার্মেসি, ছেলের ফিরতে ১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা না, তাই অপেক্ষায় ছিলেন মা। কিন্তু মায়ের সে অপেক্ষা আর ফুরায়নি।

দুইদিন পর ইয়াছিনের ভাসমান লাশ পাওয়া যায় বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের লেকে। চিকিৎসকদের ধারণা, ১৭ বছর বয়সী এ কিশোরকে হত্যা করা হয়েছে।

ইয়াছিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের মোহাম্মদ আলীর একমাত্র ছেলে। তার বাবা সৌদি প্রবাসী। তবে ইয়াছিন ও তার দুই বোনের পড়াশোনার সুবিধার জন্য শহরের চাষাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ইয়াছিনের মা আফরিনা নাসরিন।

বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় ইয়াছিনের মামা মনসুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, তিন ভাই-বোনের মধ্যে ইয়াছিন সবার ছোট। সে নগরীর পাইকপাড়া নয়াপাড়া এলাকার বেইজ স্কুলে পড়াশোনা করতো।এবারের এসএসসিতে জিপিএ-৪ দশমিক ৬২ পাস করেছিল।

ইয়াছিনের মামাতো ভাই মুনতাসির রহমান জিহাদ বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় হাতে মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বের হয় ইয়াছিন। কিন্তু অনেক সময় পরও বাড়িতে না ফেরায় বাসার লোকজন মোবাইলে কল দিতে থাকে। কিন্তু রিসিভ করেনি।”

রাত ২টা পর্যন্ত ইয়াছিনের মোবাইলটি সচল ছিল বলেও জানান জিহাদ।

এর মধ্যে সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে রাতেই সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন আফরিনা নাসরিন।

পরে বুধবার সকালে বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পাইনাদী সিআইখোলা এলাকায় ডিএনডি লেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে পরিবারের সদস্যরা।

এরপর থেকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন আফরিনা নাসরিন। শোকাহত এই মায়ের মানসিক পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে ছেলের বিষয়ে কথা বলা যায়নি।

তবে ইয়াছিনের মামা মনসুর বলেন, “ওর সঙ্গে কী হইসে, কীভাবে বাসা থেকে কয়েক কিলোমিটর দূরে ডিএনডি লেকে পাওয়া গেল লাশ, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পারতেছি না।”

তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।

এদিকে, দুপুর ২টায় ময়নাতদন্তের পর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হায়দার আলী শিমুল বলেন, “নিহতের মাথা ও বুকে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে মারা গেলে পেটে যে পানির উপস্থিতি পাওয়া যায় তেমনটি পাইনি। এটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে।”

এ ঘটনাটি তদন্ত করছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই ওয়ালী সওদাগর। তিনি মোবাইলে বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার রাতে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।

তিনি বলেন, “পরিবারের ভাষ্যমতে তার সঙ্গে মোবাইল থাকার কথা। কিন্তু মরদেহের সঙ্গে ফোনটি পাইনি। পরনে জুতা পেয়েছি একটি। মরদেহের অবস্থা অনুযায়ী অন্তত ২৪ ঘণ্টা সেটি পানিতে ছিল বলে ধারণা করছি।

“আমরা গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ড হলেও তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।”