
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে সরকার বিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপি নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতার জেলাজুড়ে বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। এখনও জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে আসীন না হলেও বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতাদের কাছেও রাজীবের গ্রহণযোগ্যতা অনন্য পর্যায়ে রয়েছে।
ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়েই রাজীবের উত্থান ঘটে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন তোলারাম কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। জেলাজুড়ে ছাত্রদলকে সংগঠিত করতে সেসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। রাজীব বিএনপির হাতেগোনা সেই কয়েকজন নেতাদের একজন যারা দল ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পরেও নিষ্ক্রিয় না হয়ে বরং দলকে আপন করে দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে সংগ্রাম করে গেছেন। আগলে রেখেছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের। কর্মীদের বিপদে নিজের সবটুকু দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করে গেছেন রাজীব।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পরপরই জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পান রাজীব। জেলাজুড়ে ছাত্রদলকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করেন। রাজীবের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। ২০১৩-১৪ সালের উত্তপ্ত সময়ে রাজপথে থেকে হরতাল ও অবরোধের মত কর্মসূচি সফল করতে কাজ করেন রাজীব।
আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় এই নেতাকে বহুবার জেল খাটতে হয়েছে। মামলায় জর্জরিত হয়েও দমে যাননি রাজীব। আগলে রেখেছেন নেতাকর্মীদের।
২০২২ সালের পরবর্তী সময়ে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন রাজীব। নারায়ণগঞ্জে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে রাজীবের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেছে এসকল কর্মসূচিতে। এছাড়াও ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ গুলোতে রাজীবের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকত।
দীর্ঘদিন রাজনীতি করার পরেও পদ-পদবীর পেছনে দৌড়াননি রাজীব। দলের স্বার্থে পদবির জন্য একগুঁয়েমি না করে বরং সাধারণ একজন কর্মীর মত দলের জন্য কাজ করে গেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাজীব। তবে সম্মেলনের দিন দলের ঐক্য রক্ষা ও দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সরে আসেন রাজীব।
রাজীবের এই আত্মত্যাগের ফলে সেসময় জেলা বিএনপির নেতাদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। ২০২৩ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলনে সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনসহ শীর্ষ নেতারা রাজীবের প্রশংসা করেন। সেদিন সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজীবের এই আত্মত্যাগের কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তারেক রহমান।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। সেই হরতালে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে থেকে নেতৃত্ব দেন রাজীব। আড়াইহাজারে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেসময় দেশব্যাপী এই আন্দোলনের ঘটনা আলোচিত হয়েছিল। এর কয়েকদিন পরে রাজীবকে আটক করে পুলিশ। এরপর দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয় এই বিএনপি নেতাকে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়েও ছাত্র জনতার পাশে ছিলেন রাজীব। নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছিলেন রাজীব ও তার নেতাকর্মীরা।
সরকার বিরোধী আন্দোলনের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময় বহু ঝড়ঝাপটা পোহাতে হয়েছে রাজীবকে। বছরের পর বছর মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তবুও কারও সাথে আপোষ করেননি কিংবা রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েননি। নেতাকর্মীদের আগলে রেখে সুদীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়েছেন রাজীব।