শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সিডরের মতো গতিবেগ নিয়ে ধেয়ে আসছে ‘মোখা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১৩ মে ২০২৩

সিডরের মতো গতিবেগ নিয়ে ধেয়ে আসছে ‘মোখা’

ফাইল ছবি

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। এতে উপকূলের জেলাগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবার সিডরের মতো সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।

শনিবার (১৩ মে) সকালে ঘূর্ণিঝড় মোখার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সব সাইক্লোনের বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। সিডরের সঙ্গে এর তুলনা করলে বলা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা বঙ্গোপসাগরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এর শক্তি ক্রমান্বয়ে বাড়াতে থাকবে। উপকূলে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এটি শক্তি সঞ্চয় করতে থাকবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সাগরে থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড় মোখার যে দমকা বাতাস ও ঝোড়ো হাওয়ার অবস্থা, সিডরেরও এই ধরনের অবস্থা ছিল। তবে উপকূল অতিক্রম করার সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝড়ের বৈশিষ্ট্য এবং গতিবেগ, দমকা বাতাস বা ঝোড়ো হাওয়ার ধরন পরিবর্তন হয়। সে কারণে কোনো কোনো সময়ে এই সাইক্লোনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাতাসের যে গতিবেগ থাকে তা কখনো কম কখনো বেশি হয়। এ কারণে সিডরের মতো হবে এ রকম না বলে প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে মোখা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বলা যায়।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক মো. আসাদুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, উখিয়া অঞ্চলে মোখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে। এটি যখন তীরে আছড়ে পড়বে তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৬০ কিলোমিটারের বেশি। এর প্রভাবে যে বৃষ্টি হবে, তাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব সিলেট পর্যন্ত থাকবে। বর্তমানে এর ডায়ামিটার ৫০০-৫৫০ কিলোমিটার। তীর থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে এলে এর গতি থাকবে ১৬০-১৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু এটা আরও গতি সঞ্চার করতে পারে। এই গতিতে এগোলে রোববার সকাল ১০টা থেকে ঝোড়ো হাওয়া বাড়বে।

আসাদুর রহমান আরও বলেন, পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। সিলেটেও প্রভাব থাকবে। ঢাকায় বৃষ্টি কম হবে। ঘূর্ণিঝড় মোখার ৫০০ কিলোমিটারের ডায়ামিটার থেকে (উপকূলে আঘাত হানার সময়) যদি ২৫০ কিলোমিটারও ডায়ামিটার থাকে, সেটাও তো কম না। সিডরের মতোই শক্তিশালী। তবে সিডর মাঝ বরাবর (দেশের মধ্যভাগ) দিয়ে গিয়েছিল। এটা পাশ দিয়ে যাচ্ছে। বজ্রঝড়, দমকা বাতাস, ঝোড়ো হাওয়া বাড়বে। উপকূলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় গতি সঞ্চার করতে থাকে। প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে মোখা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।