
গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জে সাইনবোর্ড–ভুঁইঘর রুটে যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে টাকা ও মালামাল লুট করা সংঘবদ্ধ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা থানা পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে লুণ্ঠিত মালামালের একটি অংশ।
পুলিশ জানায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে জনৈক আফরোজা আক্তার এনি (৩৩) তার বড় বোন ডালিয়া আক্তার (৪০) ও অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে কুষ্টিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জেএস ট্রাভেলসের একটি বাসে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরদিন (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে বাসটি ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকায় পৌঁছালে কিছু যাত্রী নেমে যায়। এরপর বাসটি পুনরায় যাত্রা শুরু করে।
ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে বাসটি ভূঁইঘর পাসপোর্ট অফিসের সামনে পৌঁছালে চারজন ব্যক্তি নিজেদের “ডিবি পুলিশ” পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির কথা বলে উঠে পড়ে। তারা প্রথমে ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে পরে যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। যাত্রীদের মারধর করে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মালামাল লুট করে নেয়।
এই সময় আফরোজা আক্তারের কাছ থেকে তারা জোরপূর্বক একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়, যার মধ্যে ছিল এক জোড়া স্বর্ণের রুলি, এক জোড়া স্বর্ণের দুল, একটি টেকনো স্মার্টফোন, একটি স্যামসাং বাটন ফোন এবং নগদ ২০ হাজার টাকা।
ঘটনার পর ১১ সেপ্টেম্বর আফরোজা আক্তার ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তে নামে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই (নিঃ) মো. জহিরুল ইসলাম। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার)-এর নির্দেশনা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৭ অক্টোবর ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে ফতুল্লার ভূঁইঘর এলাকা থেকে চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার ভূঁইঘর পশ্চিমপাড়ার মৃত শাহজাহানের ছেলে আরিফুল হক সোহান (৩৪)। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার ভূঁইঘর মাঝিরবাগ এলাকার ইসমাইল হোসেন সোহাগের ছেলে মো. হৃদয় আহম্মেদ (২৬)। চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর থানার সাচার মাঝিগাছা গ্রামের মো. জামালের ছেলে মো. সজীব ইসলাম (৩০), বর্তমানে ভূঁইঘর উত্তরপাড়ার আলীমুদ্দিন খন্দকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার ভূঁইঘর মাসুদ মেম্বারের বাড়ির পাশের মৃত ইমলাক মিয়ার ছেলে আমির হোসেন সরদার (৫০)।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে, তারা সবাই একই চক্রের সদস্য। তাদের মধ্যে রাজু, আরিফুল, হৃদয় ও সজীব পূর্বপরিকল্পিতভাবে যাত্রীবাহী বাসে স্টাফ পরিচয়ে উঠে ডাকাতি করে। সাইনবোর্ড এলাকায় জেএস ট্রাভেলসের বাসে উঠে তারা যাত্রীদের ভাড়া সংগ্রহের নাম করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং পরবর্তীতে যাত্রীদের মারধর করে নগদ টাকা, মোবাইল ও ব্যাগ লুট করে নেয়। পরে ভূঁইঘর ওভারব্রিজের নিচে নেমে পালিয়ে যায় এবং লুণ্ঠিত মাল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।
তারা আরও জানায়, রাজু ও আরিফুল হক সোহান লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন বিক্রি করে দেয় চোরাই মাল কেনাবেচাকারী আমির হোসেন সরদারের কাছে। পরে সরদার ওই ফোনটি বিক্রি করে দেন এক নারী শিল্পী বেগমের কাছে। তদন্তকালে পুলিশ শিল্পী বেগমের কাছ থেকে আফরোজা আক্তারের লুণ্ঠিত ফোনটি উদ্ধার করে।
ফতুল্লা মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অল্প সময়েই আসামিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। চক্রটির অন্য সদস্যদের শনাক্তে অভিযান চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান বলেন, বাসযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সড়কে পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ঢাকা রুটে যাত্রীবেশে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।