
প্রতীকী ছবি
৩০ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন এক ছাত্রদল নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় ২৪৮ জনকে আসামি করা হয়। এখন একাধিক নোটারির মাধ্যমে ৩০ আসামিকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছেন ছাত্রদলের ওই নেতা। ঘটনাটি বেশ কয়েক মাস আগে ঘটলেও সম্প্রতি তা প্রকাশ পেয়েছে। মামলার বাদী আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির ১নং সদস্য রতন মিয়া। তিনি উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে। তার ভাষ্য, ‘ভুলবশত’ কিছু নাম তিনি মামলায় যুক্ত করেছিলেন।
রতন মূলত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান জিকুর অনুসারী। তিনি জিকুর নির্দেশনাতেই রাজনীতি করেন। ১১ অক্টোবর কয়েক লাখ টাকা খরচ করে জন্মদিন পালন করে দলের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচিত হন জিকু।
জানা গেছে, রতন গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় ২৪৮ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জের ৪নং আমলি আদালতে একটি পিটিশন মামলা করেন। তবে মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই একাধিক নোটারির মাধ্যমে তিনি ধাপে ধাপে বিভিন্ন আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
হলফনামায় রতন উল্লেখ করেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল বুঝাবুঝির কারণে আসামিদের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তারা ঘটনায় জড়িত নন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও নন। তারা চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পেলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তিনি আরও অনুরোধ জানান, এসব আসামিকে যেন পুলিশ গ্রেফতার বা হয়রানি না করে।
তবে এ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, ‘ভুলবশত’ ৩০ জনের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাখ্যা বাস্তবসম্মত নয়। অনেকে বলছেন, বাদী হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করেছিলেন, পরে অর্থের বিনিময়ে বা অন্য প্রভাবে তাদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নোটারি সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর এক হলফনামায় বাদী ১৫৫নং আসামি তমাল মোল্লা, ২৪৭নং আসামি হিমেল মেল্লা, ২৪৮নং আসামি মামুন মোল্লা এবং ৮৪নং আসামি সালামের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেন। একই বছরের ৮ অক্টোবর আরেক হলফনামায় ২৪৪নং আসামি আব্দুল হক মিয়া এবং ২৬ অক্টোবর আরেক নোটারিতে আওয়ামী লীগ নেতা লাক মিয়া, আক্তারুজ্জামান সুমন, জাহাঙ্গীর আলম, সবুজ মোল্লা, বাদশা মিয়া, রাকিব মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল শাহরিয়ার হীরা, আজমীর ভূঁইয়া, সজিব, নুরুজ্জামান, মারুফ, রাজিব মিয়া, মনির কমিশনার প্রমুখের নাম বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
পর্যায়ক্রমে আরও একাধিক নোটারিতে ৫৪নং আসামি শাকিল, ৯৬নং আসামি সুমন, ১১২নং আসামি মাসুদ, ১১৫নং আসামি বাদল, ১১৭নং আসামি আল আমিন, ১১৮নং আসামি আ. আজিজ, ১২৯নং আসামি রুহুল আমিন, ১৪৩নং আসামি শাহিন, ১৪৪নং আসামি হেলাল, ১৬৯নং আসামি শফিকুল, ১৭০নং আসামি সেলিম মেম্বার এবং ১৭১নং আসামি নজরুলের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মামলাটির মাধ্যমে শুরু থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কিনা, নোটারির বিষয়টি তা আরও স্পষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী রতন মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। অপর দিকে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের রহমান জিকুর বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।