সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

বিগত ১৫ মাসে নারায়ণগঞ্জে ৬৫০ অগ্নিকাণ্ড!

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৪ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ০৬:০০, ৩০ নভেম্বর ১৯৯৯

বিগত ১৫ মাসে নারায়ণগঞ্জে ৬৫০ অগ্নিকাণ্ড!

অসাবধনতা আর অসচেতনতার কারণে নারায়ণগঞ্জে ঘটে চলেছে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। জেলাতে গত ১৫ মাসে ছোট-বড় ৬৫০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার। পাশাপাশি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলোকে আমলে না নেওয়াও এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে উঠলেও সময়ের সাথে সাথে তা মিলিয়ে যায়। আর বেশির ভাগ ঘটনাই হয়ে যায় দুর্ঘটনা। ফলে জবাবদিহিতা আর দায়ভার থেকে মুক্তি মেলে প্রকৃত দোষীদের।

ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্যমতে, শুধুমাত্র ২০২০ সালেই পুরো জেলায় ৫৯৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক গোলযোগে ২১৭টি, গ্যাস লাইন ও সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি। এছাড়া বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে ১৪২টি, চুলা থেকে ৪৭টি, অন্যান্য কারণে ৯৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। তাছাড়া চলতি বছরে গত সাড়ে তিনি মাসেই নারায়ণগঞ্জে ছোটবড় মিলিয়ে অর্ধশত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

চকবাজার, চুড়িহাট্টা, বনানী ট্র্যাজেডির পর গত বছরে নারায়ণগঞ্জের তল্লা মসজিদ ট্র্যাজেডিতে আবারো নাড়িয়ে তুলেছিল দেশবাসীকে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলাধীন ফতুল্লা পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে শিশুসহ দগ্ধ হয়েছিলেন অর্ধশতাধিক মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশ থাকলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ জেলা উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ আল আরেফীন জানান, অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ঘটে থাকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে। তবে সবচেয়ে যে বিষয়টি দায়ী তা হলো অসচেতনতা। বিশেষ করে বাসাবাড়ি বা হোটেল রেস্টুরেন্টে গ্যাসের চুলার চাবি ভালো করে বন্ধ করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা যায়। এছাড়া আমরা ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে দেখা যায় বৈদ্যুতিক তারগুলো বেশ পুরনো থাকে। অথচ নিয়ম অনুয়ায়ী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে এ লাইনগুলো তিন মাস অন্তর অন্তর চেক করার কথা থাকলেও তা করা হয় না।

গ্যাস লিকেজ ও সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাস লাইন থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গ্যাস লিকেজ হয়ে জমে থাকা গ্যাস থেকে। কারণ গ্যাসের লাইন অনেক পুরনো থাকে। ফলে মরিচা পড়ে পাইপগুলো একসময় লিকেজ হয়ে যায়। সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও অনেকটা একই অবস্থা। এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে ছোট্ট একটি ছোট্ট স্পার্ক, আগুনের উপস্থিতিই যথেষ্ট। মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা ওয়েভ আসবে তারপর বিস্ফোরণ হবে। পালাবার কোনো সুযোগ থাকে না। সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে ৬ বছর পর পর চেক করানো উচিত। কিন্তু তা করা হয় না। ফলে আমাদের সচেতনতার অভাবেই আমাদের প্রাণ দিতে হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ডিভিশনাল ডিএমডি মমিনুল হক জানান, গ্যাসের লাইনের লিকেজ থাকে এটা সত্য। আমরা চেষ্টা করছি এসব লিকেজ শনাক্ত করে সমস্যা সমাধানের জন্য। অভিযোগ পেলেই আমরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্যাস লাইন পরিবর্তন করে দিচ্ছি। আসলে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। একেবারে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

নারায়ণগঞ্জ পোস্ট