ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ ও বিএনপি নেতা শাহ আলমের মাঝে পুনরায় বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর বেশ কয়েকমাস শাহ আলমের সমর্থকদের নিয়ে রাজপথে জেলা বিএনপির পদবঞ্চিতরা সক্রিয় থাকলেও এখন অনেকটা একাই পথ চলতে হচ্ছে মামুনকে। এর পেছনে কারণ পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে এই দুই নেতার বিরোধ।
এর আগে অবশ্য জেলা বিএনপির সদস্য সচিব থাকা অবস্থায় শাহ আলমের লোকজনদের তার নির্দেশে আর্থিক সুবিধা নেয়ার মাধ্যমে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে পদায়নের অভিযোগ উঠেছিল মামুনের বিরুদ্ধে।
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন নারায়ণগঞ্জ-৪। আসনটিতে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন একেএম শামীম ওসমান। আপাতত নির্বাচনে না আসলেও ভবিষ্যতে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন পাচ্ছেন তার ধারণা করছে নেতাকর্মীরা। তবে আসনটিতে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন এই আসন থেকে ২০০৯ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা শাহ আলম। এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন চান মামুন মাহমুদ।
বিগত সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্বে থাকাকালীন কমিটি বানিজ্য, সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে চলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। মামুনকে সরিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে জেলা বিএনপিতে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন এই নেতা। নিজ অনুগত কর্মী সমর্থকদের নিয়ে একাই সহজ কর্মসূচিগুলো পালন করেন তিনি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর থেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন শাহ আলম। ২০১৯ সালে মামলার ভয়ে ও হয়রানি এড়াতে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান এই বিএনপি নেতা। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় মামলার ভয়ে সেসময় পদ পদবিতে আঁকড়ে থাকতে রাজি ছিলেন না বিএনপি নেতা শাহ আলম।
২০২২ সালে বিএনপির রাজনীতিতে পুনজাগরণ সৃষ্টি হলে নিজে পেছনে থেকেই অনুগতদের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন শাহ আলম। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে ও নাসির-মামুনের আমলে ঘোষিত ফতুল্লা বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায় শাহ আলমের অনুগতরা। তবে গিয়াসউদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির দায়িত্ব আসার পরপরই আবারও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন শাহ আলমের অনুগত নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলমের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। রাজপথে নেয়া দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই তার অংশগ্রহণ ছিল না। মাঝে মধ্যে ঘরোয়া কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে থাকলেও সেটি খুব বেশি সময়ের জন্য ছিল না। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও শাহ আলমের সক্রিয় কোনো ভূমিকা নেই। তার অবস্থা অনেকটা ‘কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো।
তবে শাহ আলমের অনুসারীদের দাবী আগামীতে বিএনপি নির্বাচনে এলে শাহ্ আলম বিএনপির মনোনয়নের দাবীদার হবেন।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কমিটিতে ও মাঠের রাজনীতি শাহ আলম ও মামুন গ্রুপের অবস্থান দুর্বল। বিগত কয়েক মাসে মামুন মাহমুদ ও শাহ আলমের একত্রিত হওয়ায় আশা দেখেছিল তাদের অনুগত নেতাকর্মীরা। তবে মনোনয়নকে ঘিরে তাদের বিরোধ কর্মীদের হতাশ করেছে। শাহ আলমও তার নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মামুন সঙ্গ ত্যাগ করতে।