শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

না.গঞ্জে দুই দিনব্যাপী লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসব, লাখ লাখ পূণ্যার্থীর ঢল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৯ মার্চ ২০২৩

না.গঞ্জে দুই দিনব্যাপী লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসব, লাখ লাখ পূণ্যার্থীর ঢল

মহাঅষ্টমী পূণ্য স্নানোৎসব

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পাপমোচনের বাসনায় চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী পূণ্য স্নানোৎসব।

বুধবার (২৯ মার্চ) দুই দিনব্যাপী এই উৎসব শুরু হয়। এতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে শুরু হয় উৎসবের লগ্ন। লগ্ন শেষ হবে বুধবার রাতে।

এদিকে স্নানোৎসবকে ঘিরে ভোর থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২০ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে দেখা দিয়েছে যানজট। যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ।

স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেছে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পূণ্যার্থীরা। মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আম্রপল্লব নিয়ে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেন তারা। লগ্ন শুরুর পরপরই পূণ্যার্থীর ঢল নামে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের বাসনায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পূণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে লাঙ্গলবন্দ। এবার ১৮টি ঘাটে পূণ্যার্থীরা স্নান করছেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্নানোৎসবকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে হাজারো পূণ্যার্থী নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধী (শ্মশান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালী ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, রাজঘাট, রক্ষাকালী মন্দির ঘাট, পাষাণ কালী মন্দির ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মণি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, পঞ্চপান্ডব ঘাট ও পরেশ মহাত্মা আশ্রম ঘাট দিয়ে পূণ্য স্নান করেছেন।

লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ সাহা জানান, স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পূণ্যার্থীরা এসেছেন। আমরা আশা করছি, এবার ১০ লাখ পুণ্যার্থী স্নানে অংশ নেবেন। নারীদের কাপড় বদলানোর জায়গা, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি.এম. কুদরত-এ-খুদা জানান, আমরা প্রতিবছরের ন্যায় এবছর সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, সুষ্ঠুভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা আছে। ১৮টি স্নান ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। নদের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ৪৭টি নলকুপ, একশ’ অস্থায়ী টয়লেটসহ স্নান ঘাটে কাপড় পাল্টানোর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ, আনসার ও র‌্যাবের সহস্রাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ও নদীতে নৌপুলিশ কাজ করছেন।

স্নানকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে ৫টি মেডিকেল টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘাটগুলো মেরামতে কাজ করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ।

কাচপুর হাইওয়ে থানার টিআই (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, এখন যানজট কিছুটা কমেছে। কাঁচপুর থেকে গজারিয়া পর্যন্ত রয়েছে। তবে যানজট যা কমেছে তা পুলিশের চেষ্টায়। কারণ এখনো পূণ্যার্থীদের ঢল রয়েছে। লাঙ্গলবন্দের এটুকু সড়কে দুই লাখ মানুষ যদি একসাথে নেমে যায় তাহলে তো যানজট হবেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণের।

তিনি বলেন, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপত্তি হচ্ছে মোড়ে মোড়ে হাত তুলেই সকলে রাস্তা পারাপার হয়ে যান। এর মধ্যে গাড়ি চলমান থাকলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। রাস্তা পারাপারের কারণেও যানজট হচ্ছে। আমাদের ২০টির মত টিম কাজ করছে যানজোট নিয়ন্ত্রণে।