বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১০ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শেখ সাবের মাইয়ার কাছে গেলে মনে অয় কারেন্ট-ঘর পাইতাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৪ জুন ২০২২

শেখ সাবের মাইয়ার কাছে গেলে মনে অয় কারেন্ট-ঘর পাইতাম

আজগর আলী ও তার স্ত্রী

অন্ধ আজগর আলী বয়সের ভারে নূহ্য। টিনের এক চালায় সারাক্ষণ গরমে ছটফট করেন।

গত এক বছর ধরে ঘুরেও পল্লী বিদ্যুতের লাইন পাননি অসুস্থ অসহায় মানুষটি।  

ঘর নাই, বাড়ি নাই, মাথা গোজার জন্য নাই এক টুকরো জমি। থাকেন মেয়ের কেনা জমিতে। ছেলে পাওয়ারলুম শ্রমিক সেন্টু অন্ধ পিতার খোঁজ রাখেন না। আজগর আলী (৭০) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। স্বাধীনতার আগে পরে তার দুটি চোখ অসুখে নষ্ট হয়ে যায়।  

আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার দাইরাদী গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ আজগর আলীকে সবাই ঝালমুড়ি বিক্রেতা হিসেবেই চেনে। ভিক্ষা না করে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন বলে আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ তাকে সমীহ করতেন।  
 
প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনে কারো কাছে হাত পাতেননি। ভিক্ষা না করে কাজ করেছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। দীর্ঘ ৫০ বছর স্ত্রী খুরশিদা বেগমের কাঁধে হাত রেখে হাটে বাজারে ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে অভাবের সংসারের চাকা ঘুরিয়েছেন। রোদ বৃষ্টি ঝড় মাথায় নিয়েই এক সময় ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। অথচ জীবনের শেষ বেলায় মাথার ওপর একটি বৈদ্যুতিক ফ্যানের পাখা ঘোরাতে পারছেন না। পল্লী বিদ্যুতের লাইন পাচ্ছেন না তিনি।
 
জীবন যুদ্ধে কখনো হার মানেননি অন্ধ আজগর আলী। আজ জীবন সায়াহ্নে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঝালমুড়ি বিক্রি করতে পারেন না। এক বছর ধরে বিছানায় ছটফট করছেন। মেয়ে রত্না বৃদ্ধ পিতামাতাকে ঠাঁই দিয়েছেন স্বামীর বাড়িতে। পুরনো টিন দিয়ে একটি ছোট একচালা টিনের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। বুড়োবুড়ি কোনোমতে একটি চৌকি পেতে সেখানে রাত কাটান। বাথরুমের দরজাও নেই। দূরে একটি পলিথিনের বেড়া দিয়ে প্রকৃতির ডাকের কাজ শেষ করেন।
 
জ্যেষ্ঠের এই তালপাকা গরমে অসুস্থ আজগর আলী গরমে শুধু ছটফট করেন। বেলা চড়লে ঘরটিতে টেকা দায়। রান্না ঘরের চুলার মতো গরম হয়ে যায় ঘরটি। কয়েকবার গোপালদী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ধর্না দিয়েও বিদ্যুৎ নামক সোনার হরিণের দেখা পাননি। অনেক কাকুতি মিনতি করেছেন কর্মকর্তাদের কাছে। কেউ তাকে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়নি। অন্ধ আজগর আলী দিনে দিনে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন গরমে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘শেখ সাবের মাইয়ার কাছে গেলে মনে অয় লাইনটা ও পাইতাম। একটা ঘরও পাইতাম। ’
 
এ ব্যাপারে গোপালদী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আমি কয়েকবার চাচার (আজগর আলী) নাম পাঠাইছি। কিন্তু এখনো ঘর বরাদ্ধ আসে নাই। আমি আবার নাম দিছি।

এদিকে, বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে গোপালদী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম ছারওয়ার জাহান বলেন, আমার অফিসে যথাযথভাবে আবেদন করা হয় নাই।  

আড়াইহাজার উপজেলার ইউএনও মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অন্ধ আজগর আলীর বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আগামীতে তাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর দেওয়া হবে।