মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বিদায়, যোগ দিচ্ছেন চট্টগ্রামে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বিদায়, যোগ দিচ্ছেন চট্টগ্রামে

ফাইল ছবি

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক মানবিক কাজ করে সারা দেশে মানবিক ডিসি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। রোববার (১৬ নভেম্বর) তিনি নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হোসেনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায় নিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। তার বিদায় অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও বিদায়ী জেলা প্রশাসককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। রাতে জেলা প্রশাসকের বাংলোতে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

মানবিক জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা শেষ মুহূর্তেও রেখে গেলেন মানবিকতার আরেকটি উদাহরণ। শারীরিক প্রতিবন্ধী দুস্থ এক কবিকে নিজের বাসায় আপ্যায়ন করে তাকে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার উপহার দিয়ে বিদায় নিলেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ শহরের সালেহনগর এলাকার আলী আহাম্মদ ও রহিমা বেগম দম্পতির ছেলে ইমরান আহম্মেদ (৪৬)। তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, কবি ও লেখক। তার চারটি গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

বিদায় অনুষ্ঠানের মধ্যেই জেলা প্রশাসক তাকে ডেকে পরম মমতায় কুশলাদি বিনিময় করে উপহার দিলেন ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার। বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা শেষ মুহূর্তেও তার এই মানবিক কাজের প্রশংসা করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে—বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ–আহত পরিবার, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, দুস্থ মানুষ, অসহায় শিশু, কারাবন্দি, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী—সবাইয়ের ঠিকানা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহাগকে স্মার্টফোন, সালমা জেরিনকে ল্যাপটপ; ২০ প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার ও ইলেকট্রিক চেয়ার; বিশেষ স্কুলের শিশুদের শিক্ষা উপকরণ; অসহায় আজান, নাছিমা, আলভী, সিরাজুল ও ফয়সালসহ বহু রোগীর চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা দেন।

জুলাই শহীদ ২১ পরিবারকে ৪২ লাখ টাকা, আহত ২১২ যোদ্ধাকে অনুদান, এতিমখানার ৮২ শিশুকে পাঞ্জাবি–ইফতারের ব্যবস্থা করেন।

সবচেয়ে আলোচনায় আসে তার গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ, যার সুফল জেলাবাসী পাবেন অনেক বছর।

হাসপাতালে নবজাতকের আইসিইউ চালু, খানপুর হাসপাতালে হুইলচেয়ার প্রদান, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অত্যাধুনিক সিবিসি–ইসিজি মেশিন, ফুটবল একাডেমির শিশুদের জন্য বল–বুট ও টুর্নামেন্ট খরচ বহন—উন্নয়নেও রেখেছেন ভূমিকা। এমনকি শতবর্ষী হকার ফজিলাতুন্নেছাকে খাদ্যসামগ্রী ও পুঁজি প্রদান, আর ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করতে না পারায় লাশ আটকে রাখা পিংকির মরদেহ ১৪ ঘণ্টা চেষ্টায় পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়াও তার মানবিকতার অনন্য উদাহরণ।

মানুষের সুখ–দুঃখে নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি, দ্রুত সিদ্ধান্ত ও মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করে ডিসি জাহিদুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন ‘নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক’ ও অঘোষিত জনপ্রতিনিধি।