![মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যান, টিআই শরফুদ্দিনের মাসে আয় অর্ধকোটি টাকা মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যান, টিআই শরফুদ্দিনের মাসে আয় অর্ধকোটি টাকা](https://www.narayanganjpost.com/media/imgAll/2021June/Photo_Siddhirganj_1_24-5-2023-1-2305260027.jpg)
ফাইল ছবি
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের সকল প্রধান মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। এর আগে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে সারাদেশের ২২টি মহাসড়কে লেগুনা, থ্রি হুইলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটো, ইজিবাইক ও টেম্পোসহ অযান্ত্রিক বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন সরকার। কিন্তু আদালত ও সরকারের সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত অংশে। হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এ অংশে অবাধে চলছে অবৈধ এ বাহনগুলো। এর ফলে মহাসড়কে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরছে প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই। স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বলছেন, এ সকল যান থেকে পুলিশের মাসিক আয় অর্ধকোটি।
সম্প্রতি সরেজমিন এ মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাহনগুলো। এ সকল অবৈধ যানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সকল যানের মালিকের সাথে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের টিআই শরফুদ্দিনের মাসিক টাকার বিনিময়ে তারা এ মহাড়কে চলাচল করতে পারছেন। অনেক সময় দেখা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন ও অদক্ষ চালকদের দ্বারা মহাসড়কে চালিত এসব যানবাহনগুলো বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে মহাসড়কে। ফলে প্রায়ই ঘটছে নানা মর্মান্তিক ঘটনা। গত ২০২২ সালের ৯ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম ঢালে উল্টোপথে আসা এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৫ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। মোঃ আবুল কালাম নামের শ্যামলী পরিবহনের এক চালক জানান, এসব অবৈধ যানবাহনের কারণে আমাদের অনেক ঝুকিঁ নিয়ে মহাসড়কে বাস চালাতে হচ্ছে। এসব অবৈধ যানবাহনের চালকদের কোন লাইসেন্স না থাকায় তারা কোন নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় না। অধিকাংশ সময় উল্টো পথে চলাচল করা বেপরোয়া গতির এসব বাহনকে সাইট দিতে গিয়ে বা নিতে গিয়ে আমাদেরই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। মোঃ জাহিদুল ইসলাম নামের এক কার্ভাডভ্যান চালক জানান, এ মহাসড়কে পূর্বের তুলনায় এখন অনেক অবৈধ লেগুনা এবং তিন চাকার বাহন চলাচল করে। এসব বাহনকে সাইট দিতে হর্ণ দিলেও তারা সাইট দেয় না। আসলে এসব যানবাহনের বেশিরভাগ চালক সিগন্যালই ঠিকমতো বুঝেন না। অনেক চালক থাকেন মাদকসেবী। এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দোষ হয় আমাদের। হাইওয়ে পুলিশও এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যক্রর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ কারণেই ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
সরেজমিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুর এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এ মহসড়কে নিষিদ্ধ বাহনগুলো চলছে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দিষ্ট অংকের অর্থ দিয়ে। পাশাপাশি দুরপাল্লার পরিবহন কাউন্টার, বাস-লেগুনা স্টান্ড, মহাসড়কের পাশের অবৈধ দোকান ও নিষিদ্ধ যানবাহন থেকে সরকারী রসিদ ছাড়া অর্থ আদায় করা হচ্ছে শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ড এলাকার দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) একেএম শরফুদ্দিনের নির্দেশে। এতে তাদের প্রতিমাসে অর্ধকোটি টাকায় আয় হচ্ছে বলে আদায়কারীরা জানায়। পূর্বাঞ্চলের ১৮টি জেলার বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা- সিলেট মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুর দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ এ পয়েন্ট তিনটিতে অসংখ্য বাস কাউন্টার রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কাউন্টারগুলোর স্ব-স্ব পরিবহন মালিক থেকে হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) একেএম শরফুদ্দিন প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকেন। একইভাবে দুর পাল্লার বিভিন্ন ট্টাকের ট্টান্সপোর্ট মালিক থেকেও একই অংকের মাসোহারা আদায় করছেন টিআই (প্রশাসন) একে এম শরফুদ্দিন। এছাড়াও শিমরাইল মোড়ের সিএনজি চাঁদাবাজ মিঠুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা, লেগুনা চাঁদাবাজ আতিকের কাছ থেকে ১ লাখ টাকাসহ লোকাল বাস, ট্রাক, জেলা ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা থেকে বিভিন্ন অংকের অর্থিক সুবিধা আদায় করেন তিনি। শিমরাইল ডাচ বাংলা এলাকার পূর্বপাশে হাইওয়েতে হিমাচল-নীলাচল বাস স্টান্ড থেকে মাসে লাখ টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি শিমরাইল মোড়ে ও মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ফুটপাত থেকে প্রতিমাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন তিনি। মাদানীনগরে সরকারি জায়গায় গড়ে উঠা টায়ার মার্কেট ও শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত মহাসড়কে স্থাপিত কমপ্রেসারের (হাওয়া মেশিন) প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ৩ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকেন। এতে প্রতিমাসে অর্ধকোটি টাকা মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে টিআই শরফুদ্দিনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ টিআই একেএম শরফুদ্দিন কোন মাসোহারা নেন না জানিয়ে বলেন, লেগুনা এ মহাসড়কে দীর্ঘদিন যাবত চলাচল করছে। লেগুনা যারা নিয়ন্ত্রণ করেন এরা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। লেগুনা আটক করলেই লেগুনা সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা আন্দোলনের হুমকী দেন। এছাড়াও মহাসড়কে অবৈধ যানবহন পেলেই আামরা জরিমানা, মামলা, রেকারিং করে প্রতিটি অটো থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা জরিমান নিয়ে থাকি। জনবলের সংখ্যা কম হওয়ায় শতভাগ আইন প্রয়োগ করতে পারছি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কখনো কখনো অটোগুলোকে চিরতরে নষ্ট করার জন্য ডাম্পিংও করে থাকি।