বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সোনারগাঁওয়ে ছোট মাছের বড় বাজার বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

সোনারগাঁওয়ে ছোট মাছের বড় বাজার বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাট

ফাইল ছবি

মেঘনার অথৈ জলরাশির বয়ে চলার শব্দ আর জেলেদের কোলাহল—কাকডাকা ভোরে মেঘনার দুই পাড়ের মানুষের ঘুম ভাঙে এই সুরে। এমন দৃশ্য পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার এলাকায়। এখানে গড়ে উঠেছে মিঠাপানির ছোট মাছের একটি বড় বাজার, যা বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাট নামে পরিচিত। ভোররাত থেকে শুরু হওয়া এ বাজার প্রাণ পায় সূর্য ওঠার আগেই। সারা বছরই এখানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।

বৈদ্যেরবাজার ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনার তীরঘেঁষা এই বাজারে ভোর হতেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে পাইকার, মহাজন ও খুচরা ক্রেতারা এখানে আসেন পছন্দের মাছ কিনতে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে নৌকা ও ট্রলারে করে ঘাটে ভিড়ছেন জেলেরা। এসব মাছ পাইকারদের কাছে ডাকের (নিলাম) মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। এরপর পাইকাররা মাছ নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে।

এ ঘাটে মেঘনার বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়—টেংরা, পাবদা, মেনি, বাইলা, চিংড়ি, বাইম, পোয়া, কাজলি, কাচকি, মলা, বজরি, বইছা, পুঁটি, কই, শিং, টেকচাঁদা ইত্যাদি। ছোট মাছের পাশাপাশি রুই, কাতলা, আইড়, বাঘা আইড়, ইলিশ, বোয়াল, চিতলসহ বড় মাছও ওঠে বাজারে।

ঢাকার রামপুরার বনশ্রী থেকে আসা ক্রেতা মাহবুবুল আলম ও সাজ্জাদ মিয়া বলেন, “আমরা প্রতি মাসে এখান থেকে মাছ কিনি। এখানকার মাছ খুবই তাজা ও সুস্বাদু। পরিবারের সবার কাছে এই এলাকার ছোট মাছই সবচেয়ে প্রিয়।”

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মারুফ হাসান ও আকবর আলী জানান, তারা প্রতি সপ্তাহেই বৈদ্যেরবাজার থেকে মাছ কেনেন। তাদের ভাষায়, “এখানকার মাছের স্বাদ অসাধারণ। তাই মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসে। তবে এখন দাম কিছুটা বেশি। দালালও বেড়েছে—অনেক সময় দালালের মাধ্যমে মাছ কিনতে হয়।”

ঢাকার ডেমরার পাইকারি বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, “মেঘনার তাজা ছোট মাছের চাহিদা খুবই বেশি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের অনেক ভোজনরসিক আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখেন। অনেকে বাড়িতেও মাছ পৌঁছে দিতে বলছেন। যারা একবার এই মাছ খেয়েছেন, তারা ভুলতে পারেন না। তাই অনেকেই অগ্রিম অর্ডার দেন।”

বৈদ্যেরবাজার ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উজ্জ্বল জানান, “এ ঘাটে কুমিল্লার মেঘনা থানার বিভিন্ন এলাকা, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁওয়ের নুনেরটেক এলাকার জেলেরা মাছ বিক্রি করতে আসেন। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫–২০ লাখ টাকার ছোট মাছ বিক্রি হয়।”

মাছ ব্যবসায়ী সুবল বর্মন, মনির হোসেন, শিবু বর্মন, বকুল বর্মন, নিমল বর্মন ও জীবন বর্মন বলেন, “মেঘনার তাজা ছোট মাছের কদর এখানে খুব বেশি। ক্রেতার ভিড় তাই স্বাভাবিক। অনেকেই নিলামে মাছ কিনে নেন। ছোট মাছের পাশাপাশি বড় মাছেরও ভালো চাহিদা আছে।” তারা আরও বলেন, “বর্তমান মৌসুমে মাছ কম আসে। জেলেদের কাছ থেকে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হয়। তাই বাজারেও মাছের দাম কিছুটা বেশি থাকে।”

সোনারগাঁও উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আকতার বলেন, “এই ঘাটের মাছের সুনাম এখন ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে গেছে। এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়, বিশেষ করে ছোট মাছ। মেঘনার ছোট মাছগুলো খুবই সুস্বাদু। জেলেদের সরকারিভাবে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”