শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|

শ্রাবণ ২৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

বর্জ্যরে পানিতে ডুবছে লোকালয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৭ আগস্ট ২০২৫

বর্জ্যরে পানিতে ডুবছে লোকালয়

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রনি ডাইং, ফারিয়া স্পিনিং ও জিএম ডাইং নামে তিনটি ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে পানিতে বছর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছে উপজেলার তারাব পৌরসভার রসূলপুর এলাকার প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। বিষাক্ত বর্জ্যরে পানিতে ডুবে থাকছে বাড়িঘর, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিষাক্ত পানি দিয়ে হাটাচলা করায় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ডাইং কারখানার বিষাক্ত পানিতে রসূলপুর এলাকার জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। তাই গত মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ডাইং কারখানার বর্জ্যরে পানি ফেলার পাইপগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।    

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসূলপুর এলাকায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। পৌরসভার এই ওয়ার্ডে বছর জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ রনি ডাইং, ফারিয়া স্পিনিং ও জিএম ডাইং নামে তিনটি ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে পানি। এ ডাইং কারখানাগুলো ইটিপি ব্যবহার না করে নিজেদের বিষাক্ত পানি একটি পাইপের মাধ্যমে খালে ফেলছে। সেই খাল থেকেই পুরো এলাকায় বিষাক্ত পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে গত কয়েক মাসে কয়েক দিন পরপর টানা বৃষ্টির পানি ও ডাইং কারখানার পানিতে এ জলাবদ্ধতা প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বেশি বেড়ে গেছে। এতে করে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকান-পাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে গেছে। চারদিকে জলবদ্ধতার কারণে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে বিষাক্ত পানি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার নিরসনে ডাইং কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অবস্থান নিতে গেলেও তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মী এলাকাবাসীকে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়। তবে মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ডাইং কারখানাগুলোর পানি নিষ্কাশনের পাইপ বন্ধ করে দেয়। তবে কারখানা মালিকরা যুবদল নেতা রবিউলসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে আবারও বর্জ্যরে পানি ফেলার পাইপটি খোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

রাহিমা বেগম রেনু নামে এক শিক্ষিকা বলেন, ‘তিনডা ডাইং কারখানার বিষাক্ত পানির লাইগা আমাগো এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়িতে পানি উঠছে। আমরা এলাকার মানুষ ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাইলে যুবদল নেতা রবিউল আমাগো হুমকি-ধমকি দেয়। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত কারখানাগুলোর বিষাক্ত পানি ফেলা বন্ধ করা হোক।’

সাকিব নামে এক যুবক বলেন, ‘কারখানার বিষাক্ত পানি দিয়ে হেঁটে আমাদের হাত-পা খোস-পাঁচড়ায় ভরে যাচ্ছে। আমরা এলাকাবাসী ডাইং কারখানার পানি ফেলার পাইপটি বন্ধ করে দিয়েছি। পানির পাইপ বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা আমাদের হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে।’

তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন বলেন, ‘ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে পানির কারণে বছর জুড়ে জলাবদ্ধতায় এলাকাবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডাইং কারখানার বিষাক্ত পানি ফেলা বন্ধ না হলে এলাকাবাসী নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। আমরা এ সমস্যার দ্রুত প্রতিকার চাই।’

এ ব্যাপারে রনি নিট কম্পোজিট ডাইং কারখানার জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইপিটি ব্যবহার করি নিয়মিত। আমরা কারখানার পানি পৌরসভার ড্রেনে ফেলার ব্যবস্থা করি। টানা বৃষ্টির কারণে ড্রেনের পানি বেড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে হয়তো। তবে বৃষ্টি কমলে সেটা আর থাকবে না। আমরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকাতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে। তবে ডাইংয়ের পানিতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’