শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

দেশে প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

দেশে প্রথম ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে

ফাইল ছবি

উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) চালুর মধ্য দিয়ে ২০২২ সালেই বিদ্যুচ্চালিত রেলের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এবার মূল রেলপথেও ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার রেলপথে স্থাপন করা হবে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাবে ট্রেন। এ উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হবে দুটি সাবস্টেশন। একই সঙ্গে কেনা হবে ১৬ সেট ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ইএমইউ) ট্রেন। ইএমইউগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জয়দেবপুরে নির্মাণ হবে একটি আধুনিক ওয়ার্কশপ। সূত্র- বণিক বার্তা

পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি)। এরই মধ্যে প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে রেলওয়ে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের আশা, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি একনেকে তোলা হবে। অনুমোদন মিললে ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় ধরে বাস্তবায়ন করা হবে বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ নির্মাণের এ প্রকল্প।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যুচ্চালিত এ রেলপথে কমিউটার ট্রেন চালানো হবে। দুই প্রান্ত থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ট্রেন ছেড়ে যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন দুই লাখ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই যাবে ইএমইউ ট্রেন কেনার পেছনে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ১৬ সেট ইএমইউ ট্রেন সংগ্রহে লাগবে ১ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ট্রেনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে পাঁচটি কোচ এবং প্রতি সেটে সর্বোচ্চ দেড় হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে।

ইএমইউ ট্রেনের বৈশিষ্ট্য অনেকটা মেট্রোরেলের ট্রেনগুলোর মতো হবে জানিয়েছেন ‘‌বাংলাদেশ রেলওয়ের নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্রাকশন (ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশন নির্মাণসহ) প্রবর্তনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ প্রকল্পের পরিচালক হাবিবুর রহমান। 

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের জন্য ইএমইউ দিয়ে কমিউটার ট্রেন চালানো হবে। এজন্য রেলপথজুড়ে স্থাপন করতে হবে ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম। ইএমইউ ট্রেন কিনতে হবে। ট্রেনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লাগবে একটি আধুনিক ওয়ার্কশপ। এরই মধ্যে ওয়ার্কশপের জন্য জয়দেবপুর এলাকায় জমিও চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ফতুল্লা ও টঙ্গীতে দুটি সাবস্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’ ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে বিদ্যুচ্চালিত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একনেকে পাঠানোর আগে এখনো কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের অনুমোদন বাকি রয়েছে।’

তবে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করতে হলে আগে ঢাকা-টঙ্গী অংশে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর অংশে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়া প্রয়োজন। রেল কর্মকর্তাদের মতে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ওই প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ এবং ২০২৭ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত। ফলে এর আগে নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর বিদ্যুচ্চালিত রেল প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু করা প্রায় অসম্ভব।

মাঠপর্যায়ের কাজ দেরিতে শুরু হলেও অনুমোদনের পর দরপত্র প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে রাখতে চান প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‌প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এরপর এক বছরের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড এবং আরো পাঁচ বছর রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি থাকবে। অর্থাৎ ২০৩৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটি চলবে।’

নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম বিদ্যুচ্চালিত রেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যুচ্চালিত রেল প্রবর্তনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সমীক্ষায় প্রস্তাবিত রেলপথটি দুই অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগ নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর। দ্বিতীয় ভাগ টঙ্গী থেকে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত ট্রেন প্রবর্তনের পথে দুটি ‘‌মিসিং লিংক’ বাধা হিসেবে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‌রেলওয়ে পরিকল্পনা করছে পর্যায়ক্রমে দেশের সব লাইন ব্রড গেজে উন্নীত করার। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের টঙ্গী-আখাউড়া ও লাকসাম-চট্টগ্রাম অংশ এখনো মিটার গেজ। ব্রড গেজ না হওয়া পর্যন্ত এ অংশে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।’