সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

৪ আসনে মোহাম্মদ আলী, ৩ আসনে গিয়াসউদ্দিন লড়বেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

৪ আসনে মোহাম্মদ আলী, ৩ আসনে গিয়াসউদ্দিন লড়বেন

ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে। 

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) এবং নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসনকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে-বাইরে তীব্র আলোচনা, সমীকরণ ও নীরব উত্তেজনা চলছে। একদিকে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দীর্ঘ দিনের আলোচিত-সমালোচিত কিন্তু অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ আলী। 

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মাঠের রাজনীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। দুই আসনেই নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য মনোনয়ন, জোটের হিসাব-নিকাশ এবং ‘স্বতন্ত্র পথের ভাবনা’ সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি প্রতিদিন নতুন রূপ নিচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে দলটি শরীক জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে এই আসনটি ছাড়তে চাইলেও প্রার্থীকে ভরসা করতে পারছেনা দলটি। যদিও কাসেমীকে শোকজ করেছে তার দল। তবে বেশ কিছুদিন থেকেই মাঠে নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করেও পারছেন না মুফতী মনির হোসাইন কাসেমী। বিএনপির অভ্যন্তরে ও তৃণমূলে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। কেননা এই আসনের দীর্ঘ দিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক চরিত্র মোহাম্মদ আলী ইতোমধ্যেই নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন এবং তার অনুসারীদের মধ্যে প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে তিনি বিএনপির টিকিট পাবেন বা অন্তত ধানের শীষ প্রতীকটি এই আসনে থাকবে।

কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়ায় নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, গত কয়েকদিনে মোহাম্মদ আলী তার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বিএনপি যদি ধানের শীষের প্রার্থী না দেয়, তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবেন। এই আলোচনা এখন কুতুবপুর থেকে কাশীপুর, ফতুল্লা থেকে গোগনগর সর্বত্র রাজনৈতিক চায়ের টেবিলের প্রধান বিষয়। তার জনপ্রিয়তা, ব্যক্তিগত বলয় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের সমর্থন বিবেচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, স্বতন্ত্র হলে মোহাম্মদ আলী বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন জোটের প্রার্থী কাসেমীর সামনে।

এদিকে, এই আসনে প্রতীক সংকটও বড় আলোচ্য বিষয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কাসেমী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার জোট প্রার্থী হিসেবে তার প্রতীক খেজুর গাছ। ফলে অনেকেই মনে করছেন, ভোটারদের মধ্যে ধানের শীষের শক্তিশালী আকর্ষণ থাকায় কাসেমীর জন্য পরিস্থিতি হবে কঠিন। আর ঠিক এই জায়গাতেই সুবিধা পাবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাওয়া মোহাম্মদ আলী। কারণ ভোটাররা পরিচিত মুখ ও প্রভাবশালী নেতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। ধানের শীষ না থাকলে ভোটের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি ঝোঁক তৈরি হবে এমন ধারণা আরও জোরালো হয়েছে নতুন নির্বাচন বিধির পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে জোটভুক্ত হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট করার নিয়ম যুক্ত হয়েছে।

এ সব বিশ্লেষণ মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি এখন সবচেয়ে অনিশ্চয়তায় ভরা। একদিকে জোটের কৌশল, অন্যদিকে স্থানীয় জনপ্রিয়তার সমীকরণ সব মিলিয়ে নির্বাচনী লড়াই জমে উঠবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে পরিস্থিতি আরেক রকম। এখানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বরাবরই তীব্র। কিন্তু এ মাঠে সক্রিয় মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সাবেক সাংসদ, দীর্ঘ দিনের রাজপথের সংগ্রামী নেতা এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে তার জনপ্রিয়তা সোনারগাঁ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গিয়াস উদ্দিনের সাংগঠনিক ক্ষমতা, আন্দোলনের সময় সক্রিয় ভূমিকা এবং জনসংযোগের দক্ষতার কারণে তিনি তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী।

তার নির্বাচনী প্রচারণা এখন দুই উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই তিনি গণসংযোগ, কর্মীসভা, মসজিদে দোয়া, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। গিয়াস উদ্দিনের বার্তা স্পষ্ট—ধানের শীষই মুক্তির প্রতীক, আর এই প্রতীককে শক্তিশালী করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এই প্রভাবশালী অবস্থানই তার প্রতিদ্বন্দ্বী আজহারুল ইসলাম মান্নানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি মান্নান মনোনয়ন পেয়ে সক্রিয় থাকলেও সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে তার জনভিত্তি দুর্বল, যা তৃণমূলের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। আবার গিয়াসউদ্দিনের সাথে ৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাকি প্রার্থীরাও আছেন একত্রে।

এ সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ‘গিয়াস উদ্দিন বনাম মান্নান’ বিষয়টি এখন খোলামেলা দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। তবে সিদ্ধিরগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ে গিয়াস উদ্দিনের অবস্থান বর্তমানে শক্তিশালী বলেই বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। তার অভিজ্ঞতা, ত্যাগ এবং স্থায়ী সংগঠনভিত্তি তাকে এগিয়ে রেখেছে বলে স্থানীয় নেতৃত্বও মনে করেন।

তৃণমূলের অনেক নেতা মনে করেন, যদি বিএনপি ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায় তবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে দ্রুত সমাধান নিয়ে আসতে হবে। কারণ অভ্যন্তরীণ বিভাজন কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থিতা পরবর্তীতে নির্বাচনের মাঠে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জের এই দুটি আসন বিএনপির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সম্ভাবনা আর অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই দুই পরিস্থিতিই দলের শীর্ষ নেতাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। মোহাম্মদ আলী ও গিয়াস উদ্দিন দু’জনই নিজ নিজ এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাদের সিদ্ধান্ত, কৌশল এবং ভূমিকা আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির চিত্র অনেকটাই নির্ধারণ করবে।

এই মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল। ডিসেম্বরের ২য় সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারিতে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং ৪—দুই আসনই রাজনীতির উত্তপ্ত কেন্দ্র হয়ে উঠছে।