
ফাইল ছবি
তিন মাস থেকে ছয় পর পর উচ্ছেদ হয়। তবে উচ্ছেদ হওয়া জায়গা খালি থাকে না। উচ্ছেদের কয়েক ঘন্টা পরই জায়গাগুলো আবার বেদখল হয়ে পড়ে। তবে সব কিছুই হয় দিনের আলোতে , প্রকাশ্যে। মাঝখানে দখলকারীদের অতিরিক্ত কিছু অর্থ ব্যয় হয় , কিংবা কয়েকজন নিরীহ দখলকারীদের হটিয়ে শক্তিশালী দখলকারী দখলে নেন সরকারী জায়গা। এভাবেই গত কয়েক বছর চলে আসছে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যস্ততম শিমরাইল মোড়ের রিক্সা লেনের উচ্ছেদ ও পুণঃদখল।
প্রতিদিন নির্ধারিত অংকের টাকা চাঁদা প্রভাবশালীদের দিলে দখল করা মহাসড়কের এ রিক্সা লেনে ব্যবসার বৈধতা মিলে । এর আগে মোটা অংকের অগ্রীম দিতে হয় প্রভাবশালীদের। যা চুক্তি শেষে কখনো ফিরে পায়, আবার কখনো সেই টাকা মেরে দেয় প্রভাবশালীরা।
এ রিক্সা লেন বেদখলের কারণে এ মহাসড়কে চলাচলরত রিক্সা ও পথচারীদের সমস্যার সৃষ্টি হলেও অদৃশ্য কারণে সংশ্লিষ্টদের সেই দিকে তাকানোর সময় নেই, ভ্রুক্ষেপ করেন না। যানজট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের রেন্ট-এ-কার স্টান্ড আহসান উল্লাহ মার্কেট পর্যন্ত এ রিক্সা লেন তৈরী করে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ ।
কিন্তু নির্মাণের পর থেকেই এ রিক্সা লেন দখল করে নেয় প্রভাবশালীরা । তারা ফুটপাথ দখল করে হকারদের কাছে মোটা অংকের অগ্রীম গ্রহণ করে প্রতিদিন ভিত্তিতে ভাড়া দেয় এ রিক্সা লেন । বর্তমানে এ রিক্সা লেন থেকে বর্তমান নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম ও তার পুত্র সাবেক ছাত্র-লীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন মাসে ২০ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বলে জানিয়েছেন এখানকার হকাররা ।
এ ফুটপাতে নারায়ণগঞ্জ সওজ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দোকানগুলো উচ্ছেদ করে। তবে ওই দিনই পুলিশ ও সওজ কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরই আনোয়ার ও তার পুত্র বাহিনী রিক্সা লেনের ঐ জায়গা তার দখলে নিয়ে নেয় হকারদের মাধ্যমে। সে থেকে অদ্যবধি জায়গাগুলো বেদখল হয়ে আছে। উচ্ছেদের সময় সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দখলকারীরা এসব দোকান গড়ে তুলে পরিবহন ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক হকার জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে কয়েক জন চাঁদাবাজ তার কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা নিয়ে যায়।
হকারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব দোকানপাট থেকে দৈনিক ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকেন। দোকান প্রতি ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেয় এ চাঁদাবাজ চক্র।
এ বিষয়ে নাসিক ১নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ার ইসলামের মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্বাহী পরিচালক শাহানা ফেরদৌস বলেন, আমি শুনেছি জায়গাটিতে আবার হকাররা দখল করে ফেলেছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমরা এই জায়গাটিতে আবার উচ্ছেদ করব। এই স্থানটিতে এবার আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। শিমরাইল মোড়ে অনেক দোকান তাই যেকোন বড় উচ্ছেদ অভিযান করতে হলে আমাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট সাথে রাখতে হয়, পুলিশের সহায়তা লাগে। সব জায়গায় চিঠি পাঠাতে হয় তাই মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া আমাদের তো আরো কাজ থাকে এসব কিছু মিলিয়ে আমাদেরকে মাঝে মাঝে একটু বেগ পেতে হয়।
তিনি আরো বলেন, এই জায়গা দখল সাথে যদি আমাদের সওজের কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকে বা হকার থেকে উত্তোলন কৃত চাঁদার ভাগ পায় তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আমি গত মিটিং এ সকলকে জানিয়ে দিয়েছি সবাই যেন সঠিক ভাবে থাকে । কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, আমি বেশ কয়েক বার এখানের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছি। কিছুদিন আগে সওজের কর্মকর্তারা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সেখানে আমাদের থানা পুলিশ সহায়তা করেছে।
তিনি আরো বলেন , এর আগে একাধিক চাঁদা বাজকে এই শিমরাইল মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি তারা জামিনে এসে আবার চাঁদাবাজি শুরু করলে আমরা আবার তাদেরকে গ্রেপ্তার করি। সরকারি জায়গা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।