বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সোনারগাঁয়ে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির তদন্ত শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১ জুন ২০২৩

আপডেট: ১৮:০৬, ১ জুন ২০২৩

সোনারগাঁয়ে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির তদন্ত শুরু

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা গ্রামের মমতাজ বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির তদন্ত শুরু হয়েছে। গত বুধবার নারায়ণগঞ্জ সিআইডির উপ-পরিদর্শক(এসআই) গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেন। এসময় মমতাজ বেগমের বাবার বাড়ির লোকজনসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাতের কোন এক সময় মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়। ওই মৃত্যুর ঘটনায় মমতাজ বেগমের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন থাকায় তার মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নির সন্দেহ হলে বিষয়টি রহস্যের সৃষ্টি হয়। তবে মমতাজ বেগমের বাবা ও তার পরিবারের দাবি তিনি ষ্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। এ মৃত্যু রহস্যজনক হওয়ায় নিহতের মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি বাদি হয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে ২৭এপিল পিটিশন মামলা দায়ের করেন।  

জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়হিস্যা গ্রামের খালেক প্রধানের মেয়ে মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তার স্বামী মোসলেউদ্দিন দীর্ঘদিন কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি ও ছেলে মো. মামুন আহম্মেদকে প্রণোদনা প্রদান করে। সেই প্রণোদনার টাকায় জমি ক্রয়সহ মেঘনা প্রতাপের চর এলাকায় মমতাজ বেগমের বাবা খালেক প্রধানের ৭ শতাংশ জমির ওপর একটি এক তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। সেই ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাবার বাড়ির পরিবার ও মমতাজ বেগমের মধ্যে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রতিদিন কোন না কোন ঝগড়া লেগে থাকতো। এছাড়াও মমতাজ বেগমমের টাকা ও সম্পত্তি নিয়ে পূত্রবধুর মধ্যেও কলোহ ছিল। গত ১৮ এপ্রিল রাতে কোন এক সময় মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর বিষয়টি তার পরিবার পরদিন সকালে জানতে পারে। পরবর্তীতে মমতাজ বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি আত্মীয় স্বজন ও তার মেয়েকে দীর্ঘ সময় পর জানানো হয়। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি ঘটনাস্থলে গিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পায় ও ডান চোখ রক্তাক্ত ফুলা ছিল। কিন্তু খালেক প্রধানের পরিবার এ মৃত্যুকে ষ্ট্রোক বলে দাবি করেন। এসময় শরীরে চিহ্ন থাকায় তার মেয়ে মায়ের ময়না তদন্ত দাবি করেন। এক পর্যায়ে মমতাজ বেগমের বাবার বাড়ির লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তরিঘরি করে লাশ দাফন করেন। তাছাড়া তার ঘরে থাকা টাকা পয়সা স্বর্ণলংকার ও দলিলপত্রের কোন প্রকার সন্ধান না পাওয়ায় বিষয়টি আরো সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল নিহতের মেয়ে জিনাত ফাহিমা মুন্নি নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাটি তদন্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডির উপ-পরিদর্শক(এসআই) গোলাম মোস্তফা গত বুধবার মামলার তদন্ত করেন। 

মামলার বাদি জিনাত ফাহিমা মুন্নি বলেন, আমার মায়ের স্বাভাবিক কোন মৃত্যু হয়নি। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিষয় আমাকের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমার মায়ের কক্ষ রাতের বেলায় খোলা ছিল। মা ষ্ট্রোট করে মারা গেলে দরজা বন্ধ থাকতো। সেই দরজাতে খোলা ছিল। আলমারির চাবি নেই। পরবর্তীতে আলমারি তালা ভেঙ্গে দেখা যায় মায়ের রাখা টাকা পয়সা, স্বর্ণলংকার ও দলিলপত্র খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। নানির বাড়ির পরিবারের চাপে কোন প্রকার থানায় অভিযোগ বা জিডি করতে দেওয়া  হয়নি। আমার মাকে কৌশলে কেউ হত্যা করেছে। আমার মায়ের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন চাই। 

নারায়ণগঞ্জ সিআইডির উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আদালতের নির্দেশের মমতাজবেগমের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনে প্রয়োজনে লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হবে।