
ফাইল ছবি
দৈনিক সোজা সাপটা থেকে নেয়াঃ রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
গতকাল দুপুরে শহরের চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে তারা শহরে মিছিলও করেন। মিছিলে তাদের স্লোগানের ভাষা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক আর ভবিষ্যতের স্লোগানের ভাষা ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা।
মিছিল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে অশালীন স্লোগান দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে অশালীন স্লোগানের নেপথ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এবিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টিকে অনাকাঙ্খিত বলে মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে তাঁরা আরও জানান, মিছিলে নানা মতের, নানা ধরনের মানুষ এসেছে। উপস্থিত অনেকে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের স্লোগান দিয়ে থাকতে পারে।
টিনের চালে কাউয়া, তারেক রহমান....। ১২৩৪, তারেক রহমানের…..। চাঁদা দেই পল্টনে, চলে যায় লন্ডনে। চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইয়ের জীবন দে ইত্যাদি স্লোগান ছিলো বেশ আপত্তিকর বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী সচেতন নাগরিক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হওয়া মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব হয়ে আবার শহীদ মিনার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রেসক্লাব অতিক্রম করে সামনে এগুলে এ সকল অশালীন স্লোগান উঠতে শুরু করে। এসময় বিষয়টি নজরে আসে জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের। এক পর্যায়ে মিছিল শেষ করার নির্ধারিত স্থান শহীদ মিনার যাওয়ার আগেই মিছিলটি সমাপ্ত ঘোষণা করেন তাঁরা।
এদিকে এই ঘটনার পর রবিবার (১৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিছিলের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। এসকল ভিডিওতে দেখা যায়, ঢাকার নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে করা বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই হাস্যোজ্জ্বল মুখে স্লোগান দিচ্ছে। মিছিলে অশালীন স্লোগান দেয়া ব্যক্তিদের অনেকের বিরুদ্ধে অতীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় সরকারি তোলারাম কলেজের ছাত্র ফারাবী মাহতাব মাসুমের ছবি। যিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে ছিলেন সক্রিয় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়কও।
ফারাবীর একটা ছবি ব্যাপক ভাইরাল হয় যেখানে “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” লেখা দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ফারাবী আর ছবির ক্যাপসনে লিখা “প্রাণের স্পন্দন, প্রাণের সংগঠন, যৌবনের প্রথম ভালবাসা ও প্রথম আবেগ, বিপ্লবী বাংলার বিপ্লবী সংগঠন- ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ ”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরিফিন তায়েফ নামে ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে কি আওয়ামীলীগের পুনর্বাসন করছে বৈষম্য বিরোধী?
এই আওয়ামী লীগ করা ছেলেদেরকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তারা কোন হত্যা কারির বিচারের জন্য দারিয়েছে। তাদের অট্ট হাসি দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য ও একটা দলের নেতা, বীর মুক্তিযোদ্বাকে নিয়ে হাসি তামাশা আর ব্যঙ্গ করতে ব্যাস্ত। রাজনীতি করলে সুস্থ রাজনীতি করুন, গঠন মুলক সমালোচনা করুন, বাকশালের বিরুদ্ধে কথা বলা বীর উত্তমকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা কখনোই সুস্থ রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ না।”
এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফারাবী জানান, স্লোগানের বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সবাইকে স্লোগান দেয়ার বিষয়ে বারবার সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। এমন কোন স্লোগান দেয়া যাবেনা যা আমাদের সংগঠন রীতি পরিপন্থী। অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য বলা হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে জানান, অতীতে আমরা শুধু আওয়ামীলীগ সম্পর্কেই জানতে পেরেছি। আশেপাশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে চলা ফেরার কারণে ছাত্রলীগের সাথেই ছিলাম। কিন্তু যখন আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগের নৃশংসতা দেখেছি বিশেষ করে চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের উপর হামলার পর আমি ঘৃণা ভরে ছাত্রলীগকে প্রত্যাখ্যান করেছি। যা আমি ফেসবুকে গতবছরের জুলাইতে শেয়ার করেছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন স্লোগান এবং ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ হচ্ছে কি না এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক নীরব রায়হান বলেন, একটা আক্ষেপের যায়গা থেকে যখন কেউ তিক্ত হয়ে যায় তখন অনেকে অনেক কিছুই বলে। তবে আমরা যারা সামনে ছিলাম তাঁরা বলেছি, এমন স্লোগান সঠিক না। তবে এমন হত্যাকান্ড বিশ্বজিতের পর এই প্রথম আর আমাদের এই মিছিলে নানা ধরনের আর নানা সংগঠনের মানুষ যুক্ত হয়েছে। অনেকেই হত্যাকান্ডের বীভৎসতায় বা আক্ষেপে এমন স্লোগান দেয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা বা কলেজ-ভার্সিটি থেকেও এমন স্লোগান দেয়ায় অনেকে না বুঝে এমন স্লোগান দিয়েছে। এমন স্লোগান শোনার সাথে সাথে আমি মাইক নিয়ে আমাদের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করি। তবে কে বা কারা এমন স্লোগান দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করতে চেয়েছে সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।