শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সিদ্ধিরগঞ্জে নুর হোসেনের ভাই ও ভাতিজার হাতে জিম্মি আজিজ শপিংমল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৬ মে ২০২৩

সিদ্ধিরগঞ্জে নুর হোসেনের ভাই ও ভাতিজার হাতে জিম্মি আজিজ শপিংমল

ফাইল ছবি

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের উত্তর পাশে গড়ে উঠা বহুতল ভবন বিশিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আজিজ কো-অপারেটিভ শপিংমলটি এখন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ঘাতক নুর হোসেনের ভাই নাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর উদ্দিন ও ভাতিজা বিতর্কিত নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নিয়ন্ত্রণে। তারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বকভাবে শপিংমলটি জিম্মি করে রেখেছেন বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের। 

সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডস্থ মুক্তি সরণিতে নির্মাণাধীন আজিজ কো-অপারেটিভ শপিং মলটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান এম. তাজুল ইসলাম- এর মালিকানাধীন সৌদি বাংলা প্রপার্টিজ এর কাছ থেকে ক্রয়ের পর বর্তমানে এই শপিং মলটির মালিক আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লি.। এই শপিং মলের মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি দেওয়ানি মামলা ঢাকার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে পেন্ডিং আছে। যার দেওয়ানি মামলা নং-৪৬৫/২২। কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্বেও কাউন্সিলর বাদল ও তার চাচা নুর উদ্দিন অপর পক্ষের হয়ে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শপিংমলটি জিম্মি করে রেখেছে। কর্তৃপক্ষ ব্যতীত শপিং মলের দোকান বিক্রয় সংক্রান্ত ও দোকানের কিস্তি বাবদ কোন প্রকার লেনদেন সৌদি বাংলা প্রপার্টিজ-এর কারো সাথে না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলেও কাউন্সিলর বাদল ও নুর উদ্দিন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 

অভিযোগ রয়েছে, সাত খুনের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা হওয়ায় নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডে তার প্রভাব অনেক। তার কথা না শুনলেই তার উপর নেমে আসে বিভিন্ন নির্যাতন। নুর হোসেনের ভাই নুর উদ্দিন হলেন ভাতিজা কাউন্সিলর বাদলের বুদ্ধিজীবি। নুর উদ্দিনের পরামর্শেই সকল অপরাধ কর্মকান্ড করে থাকেন বাদল। কিছুদিন পূর্বে এই শপিংমলটির সামনের অংশে সিদ্ধিরগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনস্থ সরকরি জলাশয় ভরাট করে ও জোরপূর্বক ভাবে দখল করে ঈদ বাজার ও মেলা গড়ে তুলেছিলেন বিতর্কিত এই কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। সৌদি বাংলা ঈদ বাজারের নামে অগ্রিম ও ভাড়া বাবদ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা। 

জানা গেছে, শিমরাইল মোড় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে নবনির্মিত আজিজ শপিংমলটির সামনে প্রায় এক একর জায়গায় সরকারি জলাশয় ভরাট করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নাসিকের তিন নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল। ভেঙে ফেলেন মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টার। টিনের বাউন্ডারি দিয়ে নির্মাণ করা হয় বাজার। বাজারে পজিশান বাবদ ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে অগ্রিম নেন দোকানদারদের কাছ থেকে। আদায় করা হতো দৈনিক ভাড়া। কাউন্সিলরের অন্যতম সহযোগী সাকের রিপন নিয়ন্ত্রন করেছিলেন বাজারটি। সেই বাজার থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাদলের বিরুদ্ধে। 

এছাড়াও গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেনকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছিলো বিতর্কিত বর্তমান কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে। তখন আলমগীর হোসেনের সমর্থকদের মারধরও করেছিলেন বাদলের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ঘটনায় বাদলের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ভুক্তভোগী আলমগীর। শাহজালাল বাদল সাতখুন মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী নুর হোসেনের ভাতিজা। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেওয়া, সরকারি যায়গা দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি তিনি আবারও আলোচনায় আসেন বাদলের দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্বহত্যার মধ্য দিয়ে। অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথম স্ত্রীর কোন খোঁজ খবর নেন না। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও এনেছিলেন প্রথম স্ত্রী সাদিয়া নিঝু।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে এসব অভিযোগ করেন তিনি। কাউন্সিলর বাদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সাদিয়া নিঝু সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০৭ সালে শাহজালাল বাদলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু সে আমাকে স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। আমাদের একমাত্র ছেলে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা টেস্ট টিউব) পদ্ধতিতে হয়েছে। কারণ সে (বাদল) সন্তানদানে সম্পূর্ণ অক্ষম। সে আমার অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তার চাচা, চাচাতো ভাই কাউকে সে প্রধান্য দেয় না। বাদল তার কোনো খরচ দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি আত্বহত্যা করেন। 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান, কাউন্সিলর বাদলের অনুমতি ছাড়া এই নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডে কোন কিছুই হয় না। তার নিয়ন্ত্রনেই সব কিছু রয়েছে। বিশাল এক সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছেন আলোচিত সাত খুন মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল। কোন সংঘর্ষে জড়ালে প্রত্যেকের হাতেই থাকে অস্ত্র। এক সময়ে শাহজালাল বাদলের চাচা নুর হোসেন অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরতেন। বর্তমানে সেই অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান ভাতিজা শাহজালাল বাদল। অনেকে বলছেন নুর হোসেনের অস্ত্র ভান্ডার এখন বাদলের কাছে। স্থানীয়রা জানান প্রশাসন তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তাই তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, কোন ভুমিদস্যু, সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দেওয় হবে না। সে যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।