
প্রতীকী ছবি
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এ কর্মসূচি দিয়ে উঠে আসা অনেক তরুণ ক্রীড়াবিদ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গতকাল শুরু হওয়া ১০ ডিসিপ্লিনের কর্মসূচি নিয়ে কি তেমন আশা করা যাচ্ছে!
হ্যান্ডবল, কাবাডি, ভলিবল, বাস্কেটবল, ভারোত্তোলোন, সাইক্লিং, জিমন্যাস্টিকস, জুডো, দাবা ও ক্রিকেটে অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে বিভিন্ন জেলা থেকে একজন করে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদের নাম পাঠানো হয়েছে, যাদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গতকাল শুরু হয়েছে চূড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়া। তৃণমূল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অধীন বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা থেকে বাছাইকৃতদের তালিকা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় (ডিএসএ) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত বাছাইয়ের মাধ্যমে জেলা থেকে ১০ ডিসিপ্লিনে একজন করে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের নাম পাঠানোর কথা।
এনএসসির নির্দেশনা অনুসরণ করলে এ কার্যক্রম ঘিরে প্রতি জেলার ক্রীড়াঙ্গনে শোরগোল হওয়ার কথা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ সম্পর্কে অনেক জেলার ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা কিছুই জানেন না। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন জেলা থেকে সংশ্লিষ্টরা মাঠে না গিয়ে নিজেদের মতো করে খেলোয়াড় তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে এ তালিকা কে পাঠিয়েছেন, তা জানেন না ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা! প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত এ জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার কালবেলাকে বলেছেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এ কারণে ডিএসএর বিষয় আমার দেখার কথা নয়। ক্রীড়া অফিসার হিসেবে আমি গাজীপুর ডিএসএর দায়িত্ব পালন করছি। সেখানে নির্দেশনামাফিক প্রতিভা বাছাই করে পাঠিয়েছি।’ নারায়ণগঞ্জ ডিএসএ অফিসের দায়িত্বে থাকা আব্দুল করিমও বাছাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নন বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া অফিসার না থাকায় ডিএসএর কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলেন স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসিনা মমতাজ। এ কর্মকর্তাও এনএসসির প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি সম্পর্কে অবগত নন বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন।
১০ ডিসিপ্লিনে প্রতিভাবান খেলোয়াড় চাওয়া হলেও জিমন্যাস্টিকস ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা থেকে ৯ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে যেভাবে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ছিল, সেটা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভারোত্তোলন ও বডিবিল্ডিং কোচ মনোতোষ ঘোষ বলছিলেন, ‘বিগত দিনে জেলায় এমন কোনো কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। ক্রীড়া সংস্থা ঘনিষ্ঠ আমরা যারা আছি, তাদের এ কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো কিছু জানা নেই।’
বগুড়া থেকে ১০ ইভেন্টের মধ্যে ক্রিকেট, কাবাডি, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, দাবা ও ভলিবলে ক্রীড়াবিদের নাম পাঠানো হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্দিষ্ট ভেন্যু না থাকায় ভারোত্তোলন, সাইক্লিং, জিমন্যাস্টিক ও জুডোতে ক্রীড়াবিদের নাম পাঠানো যায়নি। উত্তরবঙ্গের এ জেলা থেকে ৬ জনের নাম পাঠানো হলেও বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকছে এখানেও।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে বিপুল অর্থ খরচ হলেও আদৌ তার সুফল পাওয়া যাবে কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। প্রতিভা বাছাইয়ে জেলা পর্যায়ের ছন্নছাড়া অবস্থাকে দুঃখজনক বললেন দাবা কোচ আবু সুফিয়ান শাকিল, ‘নির্দেশনামাফিক জেলা পর্যায়ে প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ পাঠালে তা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখত। কোনো বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়া ক্রীড়াবিদদের নাম পাঠানোটা দুঃখজনক!’
জেলা পর্যায়ের বাছাইয়ে ছন্নছাড়া অবস্থা সম্পর্কে জানার পর এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। কালবেলাকে তিনি বলছিলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। সেটা অনুসরণ করা হয়েছে কি না, আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব। অসংসতি থাকলে আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’