চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহরের রাস্তাঘাট, অলিগলি, মার্কেট এলাকা থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির সামনে পর্যন্ত ঝুলছে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির অসংখ্য তার। এই ঝুলন্ত তারগুলো শুধু শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে না, বরং প্রতিদিনই মানুষের জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া, দেওভোগ, খানপুর, ফতুল্লা, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জসহ প্রায় সব এলাকাতেই এখন এই তারের জট চোখে পড়ে। কোথাও বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে একসঙ্গে ঝুলছে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভির তার, আবার কোথাও পুরনো ছেঁড়া তার বাতাসে দুলছে বা রাস্তায় পড়ে আছে। এতে যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি ছোটখাটো আগুন লাগার ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
ফতুল্লার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, বৃষ্টির সময় রাস্তায় বের হওয়া মানে ভয়। কখন কোন তারে বিদ্যুৎ আছে বোঝা যায় না। কয়েক মাস আগে আমাদের গলিতে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঝুলন্ত তারে ছুঁয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।
নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ডিপিডিসির কর্মকর্তারা জানান, শহরে বর্তমানে প্রায় দুই লাখের বেশি বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। এর বাইরে শতাধিক ইন্টারনেট ও ক্যাবল অপারেটর নিজেদের সুবিধামতো বিদ্যুতের খুঁটিতে তার ঝুলিয়ে রেখেছে। এতে খুঁটির ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে, কোথাও খুঁটি হেলে পড়ছে, আবার কোথাও পুরো খুঁটি উপড়ে যাচ্ছে।
এদিকে এসকল তারের জটলার কারণে শুধু ঝুঁকি নয়, সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। শহরের চাষাঢ়া ও আদালতপাড়া এলাকায় ব্যবসায়ী আবদুল করিম বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়কগুলো এখন তারের জঙ্গল হয়ে গেছে। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যেতে মাথায় তার লাগে। শহরের সৌন্দর্য একেবারে হারিয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে জেলার অগ্নিকাণ্ডের ২৫ শতাংশই ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা তারের জট থেকে। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ফতুল্লা, বন্দর ও শহরের পুরোনো এলাকায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আদলে নারায়ণগঞ্জেও ‘আকাশ তারমুক্ত শহর’ গড়ার পরিকল্পনার কথা একাধিকবার শোনা গেলেও বাস্তবে কোন কাজ দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ, বিটিসিএল, ক্যাবল অপারেটর ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে কোনো কার্যকর উদ্যোগই দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, শহর সুন্দর করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শহরের অব্যবহৃত তার অপসারণের উদ্যোগ নিলেও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বিভিন্ন অপারেটর নিজেদের তার সরাতে আগ্রহী নয়। আমরা এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছি। আশা করি সকলের সহযোগিতা পাবো।
তিনি বলেন, যদি ভূগর্ভস্থ নেটওয়ার্ক তৈরি করা না যায়, তাহলে অন্তত বিদ্যমান তারগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজাতে হবে। বিদেশের অনেক শহরে ওপরে তার থাকে, কিন্তু তা গোছানো ও নিরাপদ।

