ফাইল ছবি
তাঁতশিল্প জাতির ঐতিহ্যের শেকড়ে প্রোথিত। জীনধারার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গাঙ্গিভাবে। আবহমান বাংলার গ্রামীণ জনপদে গণমানুষের বস্ত্রের সংস্থান তাঁতশিল্পর হাত ধরে অগ্রসরমাণ। ঊষালগ্নে যখন যান্ত্রিক তাঁতের পদধ্বনি শোনা যায়নি, তখন থেকে তাঁতশিল্প গণমানুষের বস্ত্রের জোগান দিয়ে আসছে। সেই তাঁতশিল্প আজ কঠিন জটিলতায় আক্রান্ত।
দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, ভারত থেকে গ্রে-কাপড় আসা বন্ধ না হওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। আখাউড়া, বি-বাড়িয়া ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে বাঞ্ছারামপুর হয়ে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের গোপালদী বাজারে অবাধে পাচার হয়ে আসে এসব কাপড়ের চালান। ভারতীয় গ্রে-কাপড় ও বন্ড সুতার কারণে ধুঁকছে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার তাঁতশিল্প।
তাঁতের কাপড় মানুষের জীবনধারার সঙ্গে সংযুক্ত। যখন কাপড়ের কলকারখানা ছিল না, তখন গ্রামীণ হস্তচালিত তাঁতশিল্প সর্বসাধারণের পরিধানের কাপড়ের আনজাম দিয়েছে। তাঁতই তখন ছিল পরিধানের কাপড় সরবরাহের একমাত্র ভরসাস্থল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই নির্ভরতা ছিল তাঁতে। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। এখন একদিকে আধুনিক যন্ত্রচালিত তাঁত পাল্লা দিয়ে চলেছে, অন্যদিকে ভারতীয় কাপড়ের অবাধে প্রবেশ বিলপ্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশীয় তাঁতশিল্পকে।
এমনি তথ্য উঠে এসেছে শেয়ার বিজের একটি সংবাদে। ওই সংবাদের একাংশে বলা হয়েছে, যে কয়টি কারণে আড়াইহাজারের পাওয়ারলুম (গ্রে-কাপড় তৈরি) ব্যবসায় ধস দেখা দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারতীয় গ্রে-কাপড়। এছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, ভারত থেকে আসা শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিসও এ ধসের জন্য দায়ী। দেশি কাপড়ের বাজার মন্দার কারণে টেক্সটাইল মালিকরাও লোকসানে পড়েছেন। ফলে আড়াইহাজার ও গোপালদী বাজার এলাকায় পাওয়ারলুম ব্যবসাতেও মন্দা চলছে।
কয়েকদিন আগে স্পিনিং মিলগুলো লোকসানের কবলে পড়ে বন্ধ হওয়ার সংবাদ আমরা দেখেছি। এখন শুনতে হচ্ছে তাঁতশিল্পের বিপর্যয়ের কথা। স্পিনিং মিলগুলো লোকসান উচ্চ করারোপের জন্য হলেও তাঁতশিল্প পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতীয় কাপড়ের চোরাই পথে অবৈধ উপায়ে প্রবেশের কারণে। দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় গ্রে-কাপড়ের এই আগ্রাসন চলমান থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো অভিযান পরিচালনা করেন না। যার ফলে অবাধে শুধু নয়, অনেকটা নির্ভয়ে বসতি গেঁড়ে বসেছে অবৈধ এই ভারতীয় পণ্যটি। যার ধারাবাহিকতায় দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মরছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প।
দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি হলো বন্ডের সুতা অবৈধভাবে বিক্রি করায় শুরু হয়েছে তাঁতশিল্পের অন্তিমযাত্রা। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা সুতায় সয়লাব গোপালদী বাজারের সুতার আড়তগুলো। অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বন্ড সুবিধার আমদানি করা এসব সুতা। আর এ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
আমরা মনে করি, যে কোনো মূল্যে তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে এই অবৈধ তৎপরতাগুলো বন্ধ করতে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। যেন হাতেনাতে ধরা যায় তাঁতশিল্পের চিহ্নিত শত্রুদের। তাহলেই হয়তো বাঁচানো যেতে পারে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে। আমরাও তাই মনে করি।

