শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ৮ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানিয়ে না.গঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী নেতার পদত্যাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২৩ মে ২০২৫

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবী জানিয়ে না.গঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী নেতার পদত্যাগ

ফাইল ছবি

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনকে দেশের জন্য কল্যাণকর দাবী করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আবু হুরায়রা তানজীম।

শুক্রবার (২৩ মে) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে একথা জানান তিনি।

এসময় ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে সরাসরি জড়িত ছিলাম। সকল শ্রেণী পেশার, রাজনৈতিক দল, অরাজনৈতিক ব্যাক্তি, ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে হাসিনার পতন হয়েছে! কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি হয়েছিলো কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের সমন্বয়ে। হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে যেমন প্রতিটা শ্রেণির লোক ছিলো, হাসিনার পতনের উপর গড়ে উঠা এই সংগঠনটায় সকলে ছিলোনা! আরও দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই প্লাটফর্ম শুরু থেকে অরাজনৈতিক থাকার কথা বললেও ধীরে ধীরে তা একটি দলের গোলামে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে কর্মী পাঠিয়েছে, অঘোষিত লেজুড়বৃত্তি করেছে। অথচ আমরা তাদের রাজনীতি ও ক্ষমতা হাতিয়ার হবো, এই মেন্ডেট নিয়ে জুলাই আন্দোলন করি নাই !  আমার কথা, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িত ছিলো সেই প্রত্যেকটা ব্যাক্তি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ! মুখে অরাজনৈতিক হওয়ার কথা বলেও বাহিরে এই কাজ করা নিঃসন্দেহে প্রতারণার শামিল!

তিনি আরও জানান, দেশের অর্থনীতির এমনিতেই ভঙ্গুর অবস্থা। তার উপর আবার বিগত মাসগুলোতে বড় কোনো বৈদেশিক সংস্থাকে এদেশে বিনিয়োগ করতে না দেখে আমরা অত্যন্ত হতাশ! হাসিনার পতনের পর সবার মুখে একটাই কথা, 'সংস্কার'। একটা দেশ সংস্কারের পূর্বশর্ত হচ্ছে সেই দেশের অর্থনীতি ঠিক করা! আর অর্থনীতি ঠিক করতে হলে আপনার বিদেশী বিনিয়োগ লাগবে, বিভিন্ন প্রোজেক্টকে সংসদের মাধ্যমে বিল পাশ করিয়ে নিতে হবে। যেগুলো একটা নির্বাচিত সরকার ছাড়া অসম্ভব! দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্প কখনোই অস্থায়ী সরকার করতে পারবেনা ! 

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দীর্ঘ ৯ মাস হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হওয়া তো দূরের কথা, তার ধারের কাছেও যেতে পারেনি! অথচ অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাটা এই সরকারের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হওয়ার কথা ছিলো। সরকার আওয়ামীলীগের বিচার করতে পারেনি, আহতদের পুনর্বাসন করতে পারেনি। এক কথায়, একটা অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দেশের জনগণ হাজারো জীবন দানের পর যেই আশা-ভরসা নিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো, তার ১ ভাগও এই সরকার পূরণ করতে পারেনি। মানতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব!

এবার আসি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথায়। তাদের অনেকে পরিচয় ব্যবহার করে যে শুধু রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করেই অপরাধ করেছে তা না। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যা করে থাকে, ৫ আগস্টের পর থেকে এরা তাই করেছে! সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তদবীর বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ প্রতিটি কাজে এই সংগঠনের অনেকে অভিযুক্ত হয়েছে। কথায় কথায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলে নিজেরাই পুরাতন বন্দোবস্তে ডুবে থাকা মুনাফেকি নয় কী? শুধু তাই না, সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই সংগঠনের লোকদের দ্বারা রমরমা আওয়ামীলীগ পুনর্বাসন হয়েছে। দল চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত আওয়ামীলীগের আমলের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিচ্ছে! এসব কী জুলাইয়ের শহীদদের সাথে বেঈমানীর শামিল না?

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২৪ এর অভ্যুত্থান পর্যন্ত সকল আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো জনগণের ভোটের অধিকার জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়া। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়াই কিন্তু হাসিনার অধঃপতনের মূল কারণ ছিলো! 

প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব একজন সম্মানিত মানুষ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে তার পরিচিতিতে আমরা পরিচিত। আমরা চাই না, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অন্য কেউ অস্থায়ী ক্ষমতা নেক!  তাই আমরা আশা করবো ড. ইউনুস তার সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দ্রুত একটি স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচন জাতিকে উপহার দিবেন। এর মাধ্যমে দেশের জনগণ তার হারানো ভোটাধিকার ফিরে পারে।দেশে চলমান সকল সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ এটাই! কেননা ভোটের সংস্কৃতি চালু হলে ৫ বছর পর পর সবাই নিজেদের আমলনামা নিয়ে জনগণের কাছে ভোটভিক্ষা চাইতে যাবে। তখন জনগণ তাদের ভাল্লাগলে ভোট দিবে, না ভাল্লাগলে দিবেনা। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য! তাই আমি দ্রুত জাতীয় নির্বাচনকে দেশের জন্য কল্যাণকর ভেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সংগঠক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি!