মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

|

আষাঢ় ২ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

বিপন্নের পথে মেঘনা নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২০, ২২ মে ২০২৫

বিপন্নের পথে মেঘনা নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী

সংগৃহীত

দেশের যে কয়েকটি বড় নদী রয়েছে তার মধ্যে মেঘনা অন্যতম। মিঠাপানির বিশাল এক জলাধার বহন করে চলেছে এ মেঘনা। তাতে রয়েছে মিঠা পানির অনেক মাছ এবং নানা ধরনের প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদ। কিন্তু বর্তমানে মেঘনা নদীটি দূষণের কবলে পড়ে মাছ ও নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ মরে ভেসে উঠছে। যা এখন ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রবাহিত মেঘনার বিশাল জলরাশি কেন দূষিত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারিভাবে নেই কোনো উদ্যোগ। বর্ষা ছাড়া এ নদীর পানি বুড়িগঙ্গার মতো কালোরূপ ধারণ করে থাকে। সে পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন থাকে না। পানির পিএইচ লেভেলও অনেক কম। তা ছাড়া এ পানিতে মিলেছে ক্ষতিকারক অ্যামোনিয়াম। তাই তো মাছ ও জলজ প্রাণী এখন মরে ভেসে উঠছে। মরা মাছের দুর্গন্ধে মেঘনাপাড়ে বসবাসকারীদের জীবন এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

মেঘনাতে নদী মূলত ইছামতি, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী এবং শীতলক্ষ্যা থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। বুড়িগঙ্গা এসে মিলেছে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে। আর ধলেশ্বরী হয়েই মেঘনায় পানি প্রবাহিত হয়। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীও মুন্সীগঞ্জ জেলায় এসে ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশে মেঘনায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত এ দুটি নদীর দূষিত পানি ধলেশ্বরী হয়ে মেঘনায় এসে নদীকে মারাত্মক দূষিত করে চলেছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর পানি শুকনো মৌসুমে আলকাতরার মতো কালো রং ধারণ করে থাকে। সেখানে পুরো ঢাকার বর্জ্য এসে এ নদীতে পড়ে পানিকে ভয়াবহ দূষিত করে তুলছে। তার কারণেই বুড়িগঙ্গা নদীতে এখন দেশীয় প্রজাতির কোনো মাছের দেখা পাওয়া যায় না। শুধু সাকার মাছ ছাড়া এখন আর কোনো মাছ বা জলজ উদ্ভিদ বেঁচে নেই। সেই পানিই যখন ধলেশ্বরী হয়ে উজানের মেঘনা নদীতে এসে পড়ছে তখনই মেঘনার পানি বিপত্তি তৈরি করছে।

অপরদিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে নারায়ণগঞ্জের বাসাবাড়ির বর্জ্যসহ কলকারখানার সব কেমিক্যাল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতেই শীতলক্ষ্যার পানিতে এখন মাছ ও জলজ উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারছে না। কোনো দেশীয় মাছও এখন শীতলক্ষ্যায় মেলে না। সে পানিই মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী হয়ে মেঘনায় পতিত হচ্ছে। এ দূষণ মেঘনা পার হয়ে একদিন সামনের পদ্মা নদীকেও গ্রাস করে ফেলবে। তখন মেঘনার মতো পদ্মা নদীর মাছ বেঁচে থাকার নিরাপদ আবাস হারাবে। তাই অতিসত্বর বুড়িগঙ্গা এবং শীতলক্ষ্যায় বর্জ্যে নিক্ষেপ বন্ধ করা আবশ্যক। তা না হলে আমাদের মাছের ভান্ডারখ্যাত মেঘনা ও পদ্মার মাছ বিলুপ্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কাপড়ের কারখানার ডাইং মেশিনের রং ও কেমিক্যাল। তাতেই পানি আলকাতরার মতো হয়ে যাচ্ছে। সে কেমিক্যালে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে পানির পিএইচ লেভেল নামিয়ে দিচ্ছে। আর এ পানিতে যে অ্যামোনিয়া পাওয়া যায় তা বাসাবাড়ির পয়োনিষ্কাশনের স্যুয়ারেজ লাইন সরাসরি ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে নদীতে পড়ার ফলে। সরকারিভাবে কলকারখানার কেমিক্যালমিশ্রিত পানি এবং পয়োনিষ্কাশনের পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেলার কথা থাকলেও কেউ সে আইন মানছে না। যে যেভাবে পারছে নদী দূষণ করছে। আর এ বিষয়টি যারা দেখভাল করার কথা তারাও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিশ্চুপ থাকছে। তাই তো নদীর পানি এখন ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মেঘনার পানি দূষণের কবল থেকে রোধ করতে হলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ এবং চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে একযোগে কাজ করতে হবে। নিজ নিজ এলাকার কলকারখনার ক্ষতিকারক বর্জ্য রোধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দিলে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী বাঁচানো সম্ভব হবে না।