ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাতের আধারে পুরাতন মালপত্র বিক্রির সময় শিক্ষকসহ দুজনকে এলাকাবাসী আটক করেছেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮দিকে দুইটি পিকআপ ভ্যান ভর্তি শতাধিক বেঞ্চ, ফ্যান ও রড আটক করা হয়। এসময় ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল বাতেন ও অফিস সহায়ক সুমনকে আটক করা হয়। এ ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তবে বিক্রি করা মালপত্র স্কুলের এডহক কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। আটককৃত মালপত্র বর্তমানে স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত¡াবধানে রয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার যোগসাজসে প্রায় ১০লাখ টাকার মালপত্র মাত্র ৩ লাখ টাকায় রাতের আধারে বিক্রি করা হয়। এসময় মালপত্র বিক্রিয় সময় সহকারি শিক্ষক আব্দুল বাতেন, অফিস সহায়ক সুমনকে আটক করে স্থানীয়রা। তারা শতাধিক পুরাতন বেঞ্চ, ফ্যান অবৈধভাবে রাতের আঁধারে নানাখী ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেন। পরে রাতের আধারে পিকআপ ভ্যান যোগে নেওয়ার সময় আটক করা হয়। এক পর্যায়ে কৌশলে শিক্ষক আব্দুল বাতেন ও সুমন মালপত্র ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালপত্রগুলো জব্দ করেন।
স্থানীয়দের দাবি, কোন প্রতিষ্ঠানের ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দুই লাখ টাকার অধিক হলে দরপত্র আহবান করতে হয়। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও এডহক কমিটির সদস্যদের যোগসাজসে ১০লাখ টাকার মালপত্র গোপনে মাত্র ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। সেগুলো পিকআপ ভ্যানযোগে নেওয়ার সময় এলাকাবাসী আটক করেন।
পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. তকির আহম্মেদ বলেন, শনিবার বন্ধের দিন থাকায় রাতের আধারে স্কুলের পুরাতন বেঞ্চ, ফ্যান, রড ট্রাক ভর্তি করে গোপনে বিক্রি করে দেন। মালপত্র গুলো পিকআপ ভ্যান ভর্তি করে থেকে নেওয়ার সময় শিক্ষকসহ আটক আটক করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ওই মালপত্রের কোন কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ বলেন, স্কুলের বেঞ্চ, ফ্যান কোন প্রকার দরপত্র না দিয়েই বিক্রি করা হয়েছে। বৈধভাবে বিক্রি করা হলে রাতে আধারে কেন? সেগুলো এলাকাবাসী হাতে নাতে আটক করে আমাকে খবর দিয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি প্রায় ১০ লাখ টাকার মালপত্র চুরি করে বিক্রি করেছেন। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি কমিশন নিয়ে মাত্র ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শান্তি দাবি করেন।
পঞ্চমীঘাট উচচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ম্যানিজিং কমিটি ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজুলেশন করে মালপত্র বিক্রি করা হয়েছে। মালামাল বিক্রির টাকা স্কুলের ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি।
পঞ্চমীঘাট উচচ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরোনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়নি।
সোনারগাঁ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

