ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ। দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভায় বড় বড় হুংকার দিলেও রাজপথে তাদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে।
দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কোন কর্মসূচিতে দেখা যায় না সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রবিকে। গত বছর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালনকালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নিজেকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা করে আলোচনায় এসে পড়েন রবি। পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হলে সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয় রবিকে।
এরপরই মূলত রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন রবি। মাঠের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি তাকে। ঘরোয়া বিভিন্ন সভায়, গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে নিজের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে ঘিরেও বিএনপিতে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মামুন। বিভিন্ন সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামুন মাহমুদকে ভদ্রলোক হিসেবে অভিহিত করতে দেখা গেছে শামীম ওসমানকে।
মামুনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল কমিটি বানিজ্য করার। এছাড়াও সরকারি দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলার অভিযোগও রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে। এসকল অভিযোগের কারণেই মূল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আনা হয় মামুনকে। তবে এতে করে দলের প্রতি তার অবস্থান পরিষ্কার হয়, তিনি বন্ধ করে দেন দলের কর্মসূচিগুলো মূলদলের সাথে একত্রে পালন করা।
এদিকে কমিটিতে সুবিধা করতে না পেরে এখন দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন মামুন এমন অভিযোগ বিএনপির অনেক নেতার। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর ফতুল্লায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্র থেকে সমাবেশটি সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটিয়ে সফল করার নির্দেশনা ছিল দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। তবুও সমাবেশের আগে মামুনের উস্কানীমূলক মন্তব্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সমাবেশের আগের দিন ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে হাত ভেঙে দেয়া ও সমাবেশর মঞ্চ দখল করার হুমকি দেন মামুন।
আলোচনা সভায় মামুন বলেন, আগামী ২৭ তারিখের সমাবেশ হয়ত রাজপথে শেষ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। ২৭ তারিখের সমাবেশে আমাদের ব্যানারে কেউ যদি চোখ দেয় তার চোখ নামিয়ে দেব। আমাদের ব্যানারে কেউ হাত দিলে তারপর হাত বাঁকা করে দেব। তারপর শেখ হাসিনার হাত বাঁকা করে দেব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দিকে যে চোখ রাঙাবে সে চোখ উপড়ে ফেলবো। আমি ভদ্রলোক একথা সত্য। আমি কাউকে কখনও গালি দেইনি। কিন্তু আমি যখন রাজপথে নামি তখন হিংস্র সিংহ হয়ে উঠি। আমি কখনও ব্যানার ছেড়ে দৌড় দেইনি।
তিনি বলেন, ২৭ তারিখের জনসভা থেকে বড় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২৭ তারিখে আমরা মঞ্চে যাবো না অতিথিদের রিসিভ করে নিয়ে আসবো তা সময় আসলেই জানিয়ে দেব। আপাতত আমাদের টার্গেট সেখানে দশ হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটাতে হবে৷ সে সক্ষমতা আপনাদের রয়েছে। আমরা প্রমান করতে চাই সিদ্ধিরগঞ্জের মাটি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘাঁটি।
মামুনের এহেন ঘোষনার পরও রাজপথে কোন অবস্থান দেখাতে পারেনি মামুন। বরং দলের এমন একটি কর্মসূচিতেও তার অবস্থান ছিল নীরব।
এদিকে মাঝে মাঝে দলীয় রাজপথের কর্মসূচি আসলে নানা রকম হুংকার দেয়ার পর সমাবেশে মামুন মাহমুদ ও তার সনর্থকদের দেখা যায়না। কঠোর কর্মসূচিগুলোতে একেবারে অবস্থানহীন থাকেন এ নেতা। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বড় কিছু কর্মসূচি তিনি পালন করলেও দলের প্রয়োজনীয় কর্মসূচিগুলোতে তাকে পাওয়া না যাওয়ায় এখন নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি অপ্রয়োজনীয় ডেড হর্সে পরিনত হয়েছেন।