শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫

|

শ্রাবণ ৩০ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

আসন পুনর্বিন্যাস: নারায়ণগঞ্জের বন্দর ভাগ নিয়ে আপত্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:২৭, ১৫ আগস্ট ২০২৫

আসন পুনর্বিন্যাস: নারায়ণগঞ্জের বন্দর ভাগ নিয়ে আপত্তি

ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদের আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া তালিকায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে নারায়ণগঞ্জ তিন, চার ও পাঁচ আসন। এর মধ্যে বন্দর উপজেলা ভাগ নিয়ে সব রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে।

নতুন সুপারিশে বন্দর উপজেলাকে দুই ভাগ করে একটি অংশ নারায়ণগঞ্জ-৩ ও অপর অংশ নারায়ণগঞ্জ-৫ এর সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে এ উপজেলাটি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত।

নেতারা বলছেন, নতুন সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড যেটি নদী দ্বারা বেষ্টিত সেটিকে দুইভাগ করা হবে। জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এ ভৌগোলিক অখণ্ডতা, প্রশাসনিক সুবিধা ও বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।

সোনারগাঁ উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। তবে নির্বাচন কমিশনের নতুন সুপারিশে সোনারগাঁয়ের সঙ্গে বন্দর উপজেলাকে যুক্ত করা হয়েছে। এতে সোনারগাঁয়ের একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের সঙ্গে বন্দরের আরও পাঁচটি ইউনিয়ন যুক্ত হবে।

তবে বন্দরের এই পাঁচটি ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সঙ্গে যুক্ত। নতুন সুপারিশে এই আসন থেকে সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন বাদ পড়বে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড এই সংসদীয় আসনের এলাকা হিসেবে যুক্ত হবে।

তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডকেই কেবল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এলাকা হিসেবে নির্ধারণের সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

গত ৩০ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, কমিশনের অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত ৩০০ আসন নিয়ে ১০ অগাস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার ফতুল্লা, কাশিপুর, কুতুবপুর, বক্তাবলী, এনায়েতনগর ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। তবে সুপারিশে এ আসনে সদরের অপর দুটি- আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়নকে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নয়টি ওয়ার্ড বাদ পড়বে; যেগুলো নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এলাকা হিসেবে গণ্য করা হবে।

বন্দর উপজেলা ভাগ নিয়ে দলগুলোর আপত্তি

নারায়ণগঞ্জের তিনটি নির্বাচনী আসনের সীমানা নতুন করে নির্ধারণের সুপারিশের বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের মতামত চেয়েছিল বিএনপি। গত ১ অগাস্ট দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিএনপির নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “দল আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল, আমরা মতামত জানিয়েছি। পরে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছে।

“তিনটি আসনের সীমানার যে পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে, সেখানে ভোটার সংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় সেটি নতুন সীমানাতেও থেকে গেছে। নতুন সুপারিশে কোথায় তিন লাখ আবার কোথায় সাড়ে পাঁচ লাখ ভোটার। আমরা এই বিষয়গুলো জানিয়েছি।”

গত ৬ অগাস্ট নির্বাচন কমিশনে মতামত জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সাবেক আমীর এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলটির ঘোষিত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ। তিনি বন্দর উপজেলাকে স্বতন্ত্র আসন ঘোষণার মত দিয়েছেন। প্রয়োজনে পাশের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নটিও যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এই ইউনিয়নটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের অংশ।

এদিকে বন্দর উপজেলার অন্তত ২০০ ব্যক্তির স্বাক্ষরসহ নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার কথা বলেছেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম শিপলু।

তিনি বলেন, “কেবল একটি ভূখণ্ড দুইভাগ হচ্ছে না, এক উপজেলায় দুটি আসন থাকলে দুইজন এমপি আবার একজন মেয়র থাকবেন। এতে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডেও জটিলতা দেখা দিবে। এ ছাড়া নতুন সুপারিশেও ভোটার সংখ্যার তারতম্য থেকে যাবে। আইন অনুযায়ী বিষয়গুলো উল্লেখ করে সিইসিকে অবহিত করেছি।”

এর আগে ৪ অগাস্ট এক মানববন্ধনে বন্দর উপজেলাকে ভাগ করে সোনারগাঁয়ের নির্বাচনী আসনের সঙ্গে যুক্ত করার সুপারিশ বাস্তবায়ন না করার দাবি জানানো হয়। বন্দর উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে স্থানীয় লোকজন ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামও বন্দর উপজেলাকে দুইভাগ করার সুপারিশে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচনে কমিশনে লিখিত দিয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনও বন্দরের অখণ্ডতার প্রশ্নে একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের এলাকার ভোটার ভারসাম্য আনতে গিয়ে বন্দরকে একটি দীর্ঘ মেয়াদি জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

“তাদের প্রস্তাবনা অনুসারে বন্দরের এক অংশ সোনারগাঁও-৩ এবং অন্য অংশ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। যদি এই প্রস্তাবনা সিদ্ধান্তে পরিণত হয়, তবে বন্দরের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বন্দরের উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিকল্পিত বন্দর গড়ে তুলতে বেগ পেতে হবে।”

“সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে যেহেতু বন্দরের ভোটাররা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবেন না, তাই জনপ্রতিনিধিদের বন্দরের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা কম থাকবে। এতে স্থানীয় মানুষজন ভোগান্তি এবং হয়রানির শিকার হবেন।”

তিনি বলেন, “বন্দরের রাজনীতি এবং অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে গড়ে উঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। যারা এর মধ্যে বন্দরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের সঙ্গে যুক্ত।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিও দলীয়ভাবে কমিশনে মতামত জানিয়েছে বলে জানান দলটির নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয় কমিটির প্রধান ও দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন। তারাও বন্দর উপজেলার অখণ্ডতা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

বন্দর উপজেলাকে দুইভাগ করে দুটি আসনে যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে ডাকযোগে লিখিত মতামত পাঠিয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, “নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারে দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে লোকজন এসেছিলেন। তারা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন।

“যেহেতু সুপারিশ বা মতামত সরাসরি কমিশনে জানানোর কথা বলা হয়েছে, তাই তাদের কেউ কেউ সরাসরি আবার ডাকযোগেও মতামত পাঠিয়েছেন। তবে একটি মতামত আমাদের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল, যা কমিশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।”

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানিয়েছেন এই জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এতে ৪২টি আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে কারিগরি কমিটি। এর মধ্যে ৩৯টি আসনে সীমানা সামান্য পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। যে ৩৯টি আসনে ছোট-বড় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে।