শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

|

শ্রাবণ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

না.গঞ্জের ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

না.গঞ্জের ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেছেন, ফেব্রুয়ারী আমাদের মাতৃভাষা ও ত্যাগের মাস, মহান স্বাধীনতার বীজ রোপনের মাস। আমি নারায়ণগঞ্জ সহ সারা দেশের সকল ভাষা সৈনিক ও ভাষার দাবীতে সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৫২ সাল থেকে ২০০৪ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হলেও নারায়ণগঞ্জে কেন্দ্রীয় ভাবে স্থায়ী কোন শহীদ মিনার ছিল না। তবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের একান্ত চেষ্টায় চাষাঢ়া কেন্দ্রীক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার ছিল। শেষের দিকে পূর্ণাঙ্গ অবয়বে না হলেও বর্তমান শহীদ মিনার চত্বরে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে। ফলে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল একটি স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার। যেখানে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি ভাষার শুদ্ধ চর্চা তথা একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে উঠবে।

শহীদ মিনারের পরিষ্কার কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান। খোরশেদ আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের পরে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার করার সিদ্ধান্ত নেয় নব নির্বাচিত পৌর পরিষদ। চাষাঢ়ার যেখানে অস্থায়ী ও অপূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনারটি ছিল সেই জায়গাটি আমার ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। পূর্বের জায়গাই সর্বসম্মতিক্রমে শহীদ মিনার স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট দশ হাজার টাকা পৌরসভায় অনুদান দেয়। মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর নির্দেশক্রমে আমি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে তদারকি ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে আমি চরম ভাগ্যবান ও গর্বিত মনে করি।’

নকশা প্রনয়ন ও টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগের পরে ২০০৪ সালের ৮ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের ভিত্তি তৈরীর জন্য মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। মেয়র আইভীর অনুমতিক্রমে আমি কোদাল হাতে মাটিতে কয়েকটি কোপ দিয়ে ও মোনাজাতের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করি। তখন আরো উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার তৎকালীন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কদম রসুল কন্সট্রাকশনের মালিক এমরান হোসেন সহ অনেকে। ১ জানুয়ারী প্রথম ঢালাই কাজও আমার হাতে শুরু হয়। এর মধ্যে চলে আসে মহান ভাষা দিবস ২১ ফ্রেবুয়ারী। সেবার অর্ধ সমাপ্ত শহীদ মিনারেই নারায়ণগঞ্জবাসী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এভাবেই দিনে দিনে এগিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্ন যাত্রা। ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনারে অবয়ব ফুটে উঠতে শুরু করে।

শেষ হয় অপেক্ষার পালা। অবশেষে ৩০নভেম্বর ২০০৪ সালে ঠিকাদার কাজ শেষ করে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার হস্তান্তর করে। নামকরন করা হয় ”নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় পৌর শহীদ মিনার”। আজ সেই শহীদ মিনার নারায়ণগঞ্জবাসীর শিক্ষা সাংস্কৃতির পীঠস্থান। শহীদ মিনার নির্মাণে আমার ভূমিকা অনেকই হয়তো জানে না। আবার অনেকে জেনেও মানেন না। তারপরেও এই শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যখন যাই তখন দেখি হাজার মানুষ এখানে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। আরো দেখি শিক্ষা, সাংস্কৃতি, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে শতশত তরুণের পদচারণায় মুখরিত থাকে শহীদ মিনার চত্বর। তখন নিজের অজান্তেই বুকের মধ্যে গর্ব অনুভব করি এই ভেবে যে আমি এই মহান কাজটির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। এই গর্ব শুধু আমার একার নয়, এই গর্ব আমাদের ১৩নং ওয়ার্ডবাসীর সবার। কারণ তাদের প্রতিনিধি হিসাবেই এই মহৎ কাজে আমার অংশগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। মানুষের মনে ঠাই না হলেও পৌরসভার দলিল দস্তাবেজে নিশ্চই আমার নামটি থেকে যাবে যতদিন আমাদের মায়ের ভাষা থাকবে। যতদিন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে, ইনশাল্লাহ।

আগে শহীদ মিনার লাগোয়া পশ্চিম দিকের রাস্তাটির কোন নাম ছিল না। এলাকাবাসী বালুরমাঠ নামে জানতো। শহীদ মিনারের কাজ শেষ হওয়ার পরে আমার প্রস্তাবেই পৌর পরিষদ সড়কটির নাম করণ করা হয় “শহীদ ভাষা সৈনিক সড়ক”। তাছাড়া আরো একটি সড়কের নাম একজন ভাষা সৈনিকের নামে নাম করণের প্রস্তাবকও আমি ছিলাম যার সকল লিখিত রের্কড নাসিকে রক্ষিত আছে।

তথাপিও সম্পূর্ন কৃতিত্ব তাদের যারা ১৯৫২ থেকে ২০০৩ সাল পর্ষন্ত নারায়ণগঞ্জের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারের ব্যাবস্থা করেছিলেন এবং দাবী তুলেছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী শহীদ মিনারের। নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনারের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে।