শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫

|

আশ্বিন ১৬ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হল শারদীয় দূর্গা পূজা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২ অক্টোবর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জে বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হল শারদীয় দূর্গা পূজা

প্রতিমা বিসর্জন

নারায়ণগঞ্জে বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। সারাদেশের মতো শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জেও হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে শহর ও গ্রামীণ জনপদজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ভক্তদের সারি-সারি মণ্ডপে আসা-যাওয়া, বাঁশি আর ঢাক-ঢোলের বাজনা, পূজার্চনায় ভক্তিমন্ত্র আর আলোকসজ্জার ঝলকানিতে সরগরম ছিল নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি এলাকা।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের তিন নং ঘাট ও ফতুল্লা লঞ্চ ঘাট এলাকায় প্রতিমা বিসর্জনের স্থান ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে। 

এদিন বিকেল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে নদীর ঘাটে আসতে শুরু করে। ভক্তদের দল নিয়ে একেকটি মণ্ডপ থেকে প্রতিমা ট্রাকে বা নৌকায় করে আনা হয়। এসময় শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি আর দেবীর নামগান পুরো পরিবেশকে মাতিয়ে তোলে। প্রতিটি শোভাযাত্রাই যেন ছিল রঙ, আলো ও ভক্তির মিশ্রণে উৎসবের আরেক রূপ।

বিসর্জন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শহরের তিন নং ঘাট এলাকায় বিকেলে বিসর্জনস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এসময় তিনি বলেন, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে। জনগণের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার কারণেই এ আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

বিজয়া দশমীর দিন নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি বিসর্জন স্থানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়াও ছিল সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও আনসার সদস্য। প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটগুলোতে বসানো হয়েছে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিটি শোভাযাত্রায় স্বেচ্ছাসেবক দলের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না। ভক্তরা নিরাপদ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে পারবেন। এজন্য গোয়েন্দা তৎপরতা ও মাঠপর্যায়ের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ঘাট - শীতলক্ষ্যার ৩নং ঘাট, সৈয়দপুর, পাগলা, চরাঞ্চল ও ফতুল্লার বিসর্জন স্থলগুলোতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা নন, মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক মানুষও বিসর্জনের দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন। এতে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয় সম্প্রীতির আবহ, তেমনি ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধও জোরদার হয়।

শহরের ফতুল্লা থেকে আসা পূজার ভক্ত অনিন্দিতা দে বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব। পাঁচ দিন ধরে আমরা আনন্দে মেতে ছিলাম। আজ দেবীকে বিদায় জানাতে এসে মন খারাপ লাগছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, আগামী বছর আবার দেবীকে স্বাগত জানাতে পারব।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর কুমার দে জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় মোট ২২৪টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মণ্ডপের প্রতিমা জেলার প্রধান নদী শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী মোট ১৩টি নির্ধারিত স্থানে বিসর্জন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৩নং ঘাটে প্রায় ৪৫টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, এ বছর আমরা সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পেরেছি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারণ মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়। আমরা চাই, আগামী বছর আরও বর্ণাঢ্য ও নিরাপদভাবে পূজা আয়োজন করতে।