
ফাইল ছবি
শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে এখন নারায়ণগঞ্জে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমাশিল্পীদের রং-তুলির আঁচড়ে দিন দিন জীবন্ত হয়ে উঠছে দেবী দুর্গা ও তাঁর পরিবারের প্রতিমা। খড়, বাঁশ ও মাটির কাঠামোয় ধাপে ধাপে ফুটে উঠছে ঐশ্বর্যের রূপ, যা শিগগিরই শোভা পাবে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে।
বাংলাদেশের সনাতন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর, চলবে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। দেবীর আগমনী বার্তায় ইতোমধ্যেই ভক্তকুলে সাজ সাজ রব। নারায়ণগঞ্জের প্রতিমাশালায় তাই দিনরাত ব্যস্ততা ঘুম নেই কারো চোখে। শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলো একে একে রূপ নিচ্ছে।
শহরের আমলাপাড়া, গলাচিপা, টানবাজার, দেওভোগ, শীতলক্ষ্যা পাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর এলাকার প্রতিমাশিল্পীরা এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ শেষ করছেন। প্রতিমাশিল্পী কার্তিক পাল জানান, “এখন খুব চাপ। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করছি। প্রায় ৩০টির মতো প্রতিমা তৈরি করছি, এর মধ্যে কিছু ঢাকাতেও যাবে, বাকিগুলো নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মণ্ডপে।”
শিল্পীরা বলছেন, শেষ মুহূর্তে প্রতিমা রঙের কাজই সবচেয়ে কষ্টসাধ্য। খুঁটিনাটি সাজসজ্জা ও অলঙ্করণে সময় বেশি যায়। তবে প্রতিমা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা তাঁদের শ্রমকে সার্থক করে তোলে।
এবার নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ২২৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগরে প্রায় ৮৫টি মণ্ডপ এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩৯টি মণ্ডপে পূজা হবে।
প্রতিটি মণ্ডপে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। কোথাও ঝলমলে আলোকসজ্জা, কোথাও আবার সৃজনশীল প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শেষের পথে। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, আমলাপাড়া, টানবাজার, দেওভোগ, বন্দর, ফতুল্লা, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের বেশ কিছু বড় মণ্ডপে ইতোমধ্যেই দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সংকর কুমার দে বলেন, “নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে। এবার সব মিলিয়ে ২২৪টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আমরা আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই পূজা সম্পন্ন হবে।”
দুর্গাপূজা ঘিরে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, আনসার ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা প্রতিমা নির্মাণ কেন্দ্র ও মণ্ডপগুলোতে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, “ষষ্ঠী পূজা থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপ ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে। র্যাব, পুলিশ ও প্রশাসন সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে। কোনো ধরনের হুমকি নেই, তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারেন। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি এত বেশি সহায়তা এবং সহযোগিতার মনোভাব আছে বলে আমি মনে করি না।
শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ইতোমধ্যেই আলোকসজ্জা শুরু হয়েছে। নদীপাড়ের মণ্ডপগুলোয় চলছে প্যান্ডেল সাজসজ্জার প্রতিযোগিতা। চাষাড়া, টানবাজার ও দেওভোগের বড় মণ্ডপে রঙিন আলোয় সেজেছে চারপাশ। পূজা উপলক্ষে মেলায় বিক্রি হচ্ছে খেলনা, মিষ্টি ও নানা খাবার।
সিদ্ধিরগঞ্জের এক ভক্ত বললেন, “আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি দুর্গাপূজার জন্য। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে আনন্দ করি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপিত হবে।”