শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

|

আশ্বিন ১০ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের আচরণ যেমন হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অমুসলিমদের উৎসবে মুসলমানদের আচরণ যেমন হবে

ফাইল ছবি

এ দেশের মানুষের ভেতর যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা রয়েছে, পৃথিবীজুড়ে এর দৃষ্টান্ত বিরল। এই সম্প্রীতির মাঝেও যে নানা সময়ে সাম্প্রদায়িক ভুল-বোঝাবুঝি হয়নি, তা বলা যাবে না।

তবে এ দেশে ধর্মের নামে যত অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সেগুলো যতটা না ধর্মীয়, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। অধিকাংশ সময় ধর্মের লেবেল ব্যবহার করে অশান্তি উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে কিছু অসাধু মানুষ। এই সমস্যাটুকু বাদ দিলে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িকতা এই ভূখণ্ডের চিরায়ত ঐতিহ্য।

মহান আল্লাহ বলেছেন, দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন (মুমতাহিনা) এই আয়াতে মহান আল্লাহ অমুসলিমদের সঙ্গে আমাদের আচরণের নীতিমালা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তাই সাধারণ অবস্থায় অমুসলিমদের সঙ্গে স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

নবীজি (সা.) একবার একটি লাশ দেখে দাঁড়ালেন। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রসুল, এটা তো এক ইহুদির লাশ। তখন নবীজি (সা.) বললেন, সে কি মানুষ নয় (বোখারি, মুসলিম)! তাই মানুষ হিসেবে মানুষের যে মর্যাদা, সে যে ধর্মেরই হোক, তাকে সেটা দিতে হবে। এটা নবীজি (সা.)-এর শিক্ষা। তবে অতি উদারতা দেখাতে গিয়ে আপন ধর্মের নিজস্বতা ও স্বতন্ত্রবোধ সম্পর্কে আমরা যেন উদাসীন না হই, সেই দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। ইসলাম আমাদের উদার হতে বলেছে, কিন্তু উদাসীন হতে নয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার সময় অনেকে উদারতার নামে উদাসীন হয়ে পড়েন। অনেকের মুখে বলতে শোনা যায়, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। মজার ব্যাপার হলো, এই স্লোগানের প্রবক্তাগণ শুধু পূজার সময়ই এই স্লোগান দেন। ইসলামের দুই ধর্মীয় উৎসব, রোজা এবং কোরবানির ঈদে তারা এই স্লোগান দেন না। এতেই বোঝা যায়, এই স্লোগানের পেছনে তাদের বিশেষ মতলব রয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমরা চাই না, আমাদের ঈদে অন্য ধর্মের মানুষ অংশ নিক। এটা অন্যের ওপর ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার নামান্তর। কেন আমরা হিন্দুদের পূজার উৎসবে অংশ নিতে পারি না? এর কারণ, পূজার প্রধান আনুষ্ঠানিকতাই হলো শিরক। যা ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় পাপ। মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মহা অন্যায় (সুরা লোকমান)। তিনি অন্যত্র বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যাকে তিনি চান (সুরা নিসা)।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী পূজা করবে, সেখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার শিক্ষা ইসলাম আমাদের দেয়নি। কিন্তু এখানে যেহেতু শিরক হয়, তাই তাদের ধর্মীয় উৎসবে আমরা কোনোভাবেই শরিক হতে পারি না। ইসলাম এই ‘উদারতার’ অনুমোদন দেয় না। সব উদারতা যে প্রশংসনীয় নয় তার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বহুসংখ্যক রাজনৈতিক দল থাকে। প্রত্যেক দল আপন আপন আদর্শের ওপর দাঁড়িয়ে কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু উদারতার নামে কোনো একটি দলের সদস্য যদি অপর দলের অনুষ্ঠানে যোগ দেয় এবং তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে নিজ দলের আদর্শবিরোধী স্লোগান দেয়, তবে মানুষ তাকে উদার বলবে না, বর্ণচোরা মুনাফিক বলবে। রাজনৈতিক দল, যা আজ আছে কাল নেই, এর স্বাতন্ত্র্যবোধ ও নিজস্বতা যদি এত প্রবল হয়, তবে আপনার দীনি চেতনা ও নিজস্বতা কতটা শক্তিশালী হওয়া উচিত, ওপরের উদাহরণ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। রসুল (সা.)-এর স্বাতন্ত্র্যবোধ এতটাই প্রখর ছিল, আশুরার রোজাও যেন ইহুদিদের রোজার সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়ে যায়, এই বিষয়ে তিনি সজাগ ছিলেন। স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনা থেকে তিনি একটির সঙ্গে আরও একটি রোজা রাখার কথা বলেছেন। যেন ইহুদিদের আমল থেকে আলাদা হওয়া যায়। রোজা একটি ইবাদত, সেই ইবাদতের ক্ষেত্রেও তিনি অন্যের থেকে আলাদা হতে চেয়েছেন, তাহলে শিরক হয় এমন ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা কতটা খারাপ কাজ হতে পারে, সহজেই বোঝা যায়। প্রসঙ্গত আরেকটি বিষয় বলতে চাই। পূজার সময় কোথাও কোথাও মন্দির আক্রান্ত হওয়ার এবং প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এটা কোনোভাবেই জায়েজ নয়। যারা এগুলো করে, খুবই অন্যায় কাজ করে। ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান যাদের আছে, তারা কখনো এই কাজ করতে পারে না। তাই প্রত্যেক এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সজাগ থাকতে হবে, কেউ যেন মন্দিরে হামলা করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে।

জুমার মিম্বর থেকে
গ্রন্থনা: সাব্বির জাদিদ