ফাইল ছবি
নবগঠিত সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক হয়েই শুরু করেছেন শিমরাইলের বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করছেন ওই কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এস এম মাসুদ রানা।
এ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগ ও থানা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কর্মকান্ড নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা। কেউ কেউ বলছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েও তাদের শিক্ষা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হয়েই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় সকাল থেকেই শ্রমিকলীগ নেতা এস এম মাসুদ রানার নেতৃত্যে বিভিন্ন পরিবহন থেকে (রেজি: নং-২৩০২) এর নামে শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের কথা বলে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। যার আড়াল থেকে শেল্টার দিচ্ছেন শ্রমিকলীগ নেতা সামাদ বেপারী। যা সম্পূর্ন অবৈধ ও বেআইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসের হেলপার জানান, ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তারা শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নিচ্ছে। শত শত পরিবহন থেকে তারা এই চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দিলে গাড়ির চাবি আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে সড়ক দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানপাট থেকে এককালীন মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করছে এই সামাদ ওরফে লেতুর সামাদ বাহিনী। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে ফুটপাতের দোকানীরা। তাদের দাবি, আমাদের কাছ থেকে এককালীন মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রতিদিন আবার পুলিশের টহল গাড়ির খরচ ও বিদ্যুৎ খরচ বাবদ ৬০ টাকা করে আদায় করছে। আমাদের ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না। চাঁদা দিয়ে দোকান চালানো আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, সামাদ বেপারী দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন যায়গা থেকে চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করি দলের পিছনে। আর সে দলের নাম বিক্রি করে কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। তার চাঁদাবাজির বিষয়টি দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা জানেন। কিন্তু অদৃশ্য কারনে সামাদ বেপারীর বিরুদ্ধে দলের নেতারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা।
এদিকে থানা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, গত বছরের ২ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার সময় সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজির সময় সামাদ বেপারী ও এস এম মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১এর সদস্যরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতারের পর র্যাব-১১ থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবত মহাসড়কসহ সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবহন চাঁদাবাজীর সাথে জড়িত। তাই তাদেরকে শিমরাইল মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিন পরিবহন সেক্টর থেকে ২০ হাজার টাকা ও ফুটপাত থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করতো এই চাঁদাবাজরা।
এ বিষয়ে জানতে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ বেপারীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সে ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান পিপিএম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি।
উল্লেখ্য, সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যবসায়ীকে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলা তুলে নিতে মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে ছিলেন এই দুই চিহ্নিত পরিবহন চাঁদাবাজ। পরবর্তীতে ওই ব্যবসায়ী হুমকির ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি দায়ের করেন। এই দুই চাঁদাবাজ শিমরাইল মোড়ে পরিবহনে চাঁদাবাজির সময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটে বেরিয়ে নতুন করে আবার শুরু করেছে নানা অপকর্ম।