
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের পতন ঘটে। আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু।
আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরো সময়জুড়েই নানা অপকর্মের অভিযোগ আসতে থাকে বাবুর নামে। তবে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বাবু।
ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুর উত্থান ঘটে। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবে খ্যাত শামীম ওসমানের সঙ্গেও বাবুর সখ্য ছিল। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুনজরে আসেন বাবু। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সময় থেকেই বাবুকে ঘিরে নানান বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ তখন থেকেই ছিল বাবুর বিরুদ্ধে।
২০০২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নজরুল ইসলাম বাবু। এর আগে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি পদেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বাবু। এসময় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন নজরুল ইসলাম বাবু।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন নজরুল ইসলাম বাবু। সেসময় দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন তিনি। ২০০৮ সালে পুরস্কার স্বরূপ নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে তাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বাবুর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠতে শুরু করে। আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। এসকল সম্পত্তির বেশিরভাগই জবরদখল করে তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। আড়াইহাজার উপজেলাজুড়ে এসময় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন বাবু। এসকল পোষা সন্ত্রাসী দিয়েই আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি।
২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে পুনরায় এমপি হন বাবু। এরপর এক রকমের অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তিনি। লুটপাট, দখলদারিত্বের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যান তিনি। আওয়ামী লীগের আমলেই বাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে দুদক যা সেসময় একপ্রকার অকল্পনীয় ছিল। এতেই বাবুর লুটপাটের মাত্রা ধারণা করা যায়।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিতর্কিত নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে গুঞ্জন উঠলে বেকায়দায় পড়েন বাবু। পরবর্তীতে নানান উপায়ে দলের শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে মনোনয়ন বাগিয়ে আনেন বাবু।
২০১৮ সালের নির্বাচনে আড়াইহাজারে বাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম আজাদ। নির্বাচনী প্রচারণায় আজাদের ওপর একাধিকবার হামলা চালায় বাবুর সন্ত্রাসীরা। সেই বিতর্কিত নির্বাচনেও এমপি নির্বাচিত হন বাবু।
আড়াইহাজার উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌরসভাগুলোতেও বাবুর একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। নিজ অনুসারী সন্ত্রাসীদের এসকল জায়গায় দলীয় মনোনয়ন দিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার বানান তিনি।
২০২৪ সালের নির্বাচনেও একই কায়দায় এমপি হন সাবেক এই ছাত্রনেতা। তবে নির্বাচনের ছয় মাস না যেতেই বেকায়দায় পড়তে হয় বাবুকে। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ চাপে পড়লে নিজের সন্ত্রাসী বাহিনীকে ছাত্র জনতার ওপর লেলিয়ে দেন বাবু। সেসময় বাবু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় অনেকেই আহত হন, এঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে আড়াইহাজারে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর পালিয়ে যান বাবু। বেশ কিছুদিন দেশে আত্মগোপনে থাকার পর সুযোগ বুঝে দেশ ত্যাগ করেন তিন। তার দলের সন্ত্রাসীরাও পাঁচ আগস্টের পর আড়াইহাজার থেকে পালিয়ে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের পর বাবুর পলায়নে এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন আড়াইহাজারের সাধারণ মানুষ।