বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

|

আশ্বিন ২৯ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

অবহেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ডেমরা সেতু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

অবহেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ডেমরা সেতু

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে সংযুক্তকারী একমাত্র সেতু ডেমরা সেতু (সাবেক সুলতানা কামাল সেতু)। অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ও লাখো মানুষের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলেও কয়েক বছর ধরে বেহাল হয়ে আছে। 

সেতুর এক্সপানশন জয়েন্ট, কার্পেটিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রী ও চালকদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর মোট ২৪টি এক্সপানশন জয়েন্টের অন্তত ১২টির অবস্থা এতটাই নাজুক যে, কোথাও রাবার উঠে লোহার রড ও নাট-বোল্ট বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও লোহার অ্যাঙ্গেল ভেঙে মারাত্মকভাবে ধারালো হয়ে বের হয়ে আছে। এসব অংশে বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলের চাকা পড়ে বিকট শব্দে ফেটে যাচ্ছে, ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। কয়েকটি জয়েন্টের ফাঁকা এত বড় যে, নিচে শীতলক্ষ্যার পানি পর্যন্ত দেখা যায়। বৃষ্টির দিনে এসব ফাঁকে পানি জমে চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। 
ফুটপাতের ক্ষতিগ্রস্ত স্লাবগুলোও পথচারীদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর ল্যাম্পপোস্টও দীর্ঘদিন ধরে অচল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ল্যাম্পপোস্টগুলো অচল থাকায় সন্ধ্যা নামলেই পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। এ সুযোগে বেড়ে গেছে ‍চুরি ছিনতাই ও মাদক কারবার। 

গত ১ জুন গভীর রাতে অস্ত্রের মুখে এক চালক ও তার হেলপারকে জিম্মি করে পিকআপ ভ্যানসহ প্রায় ১২ লাখ টাকার মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিবহন শ্রমিক আব্দুল করিম বলেন, বড় গাড়ি উঠলেই সেতু দুলতে থাকে। ভাঙা জয়েন্টে তীব্র ঝাঁকুনিতে গাড়ির সাসপেনশন, টায়ার ও অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হচ্ছে। 

এখলাস উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও প্রকৌশলী জুনায়েদ আনজুম হৃদয় বলেন, এক্সপানশন জয়েন্ট ছোট মনে হলেও সেতুর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাবার নষ্ট হয়ে গেলে পানি ও ধুলাবালি ঢুকে কংক্রিট, গার্ডার ও বিয়ারিং ক্ষতিগ্রস্ত করে সেতুর পুরো কাঠামো দুর্বল করে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত একটি সেতু ভালোভাবে নির্মিত হলে প্রথম কার্পেটিংয়ের প্রয়োজন হয় নির্মাণের ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। তবে, ভারী যানবাহন বা বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেতুর কার্পেটিং সময়ের আগেই করতে হতে পারে। নিয়মিত ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণ করলে এই সময় আরও দীর্ঘায়িত হয়, ফলে সেতুটি দিয়ে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। ডেমরা সুলতানা কামাল সেতুর ক্ষেত্রে তেমন যত্ন নেওয়া হয়নি। ফলে সেতুটি ক্রমেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এখনই অতিদ্রুত বড় ধরনের সংস্কার না করলে সেতুটি পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।

দুর্ঘটনার শিকার স্থানীয়রা জানান সেতুর সংযোগস্থল যেন মৃত্যুফাঁদ! সেতুর পূর্বপাড়ের রাস্তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও উঁচু-নিচু হয়ে আছে, যা প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এই পথেই চার বছর আগে দুর্ঘটনার শিকার হন এশিয়ান টিভির সাংবাদিক জিএম শহিদ। সেতুর পূর্ব পাড়ে রূপগঞ্জ অংশের সংযোগস্থলে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে দীর্ঘ চার বছর অসুস্থ থেকে ছয় মাস আগে তিনি মারা যান। ​সেতুর পশ্চিমপাড়ের ঢাকার অংশেও একই চিত্র। 

প্রায় ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে সুলতানা কামাল সেতু নির্মিত হয়। ১,০৭২ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুলতানা কামাল সেতুর নাম পরিবর্তন করে ডেমরা সেতু রাখা হয়। তবে সেতুর অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহছান উল্লাহ মজুমদার বলেন, বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে সেতুটি পরিদর্শন করেছে। নতুন এক্সপানশন জয়েন্ট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই সেতুকে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে।