
ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে। এতে ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে যে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ সিস্টেম লস হচ্ছে তা বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহকালে জিরো সিস্টেম লস অর্জিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের চট্টগ্রামে এসে গুপ্তাখাল পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। একই পরিমাণ তেল পাইপলাইনে সরবরাহ করতে খরচ হবে কেবল ৯০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া সিস্টেম লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে এই পাইপলাইন ব্যবহার করে তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া হয়ে জ্বালানি তেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এবং ঢাকার ফতুল্লায়। কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ অটোমেটেড ডিপো। এই ডিপো থেকে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। যা এখন নৌপথে চাঁদপুরে পাঠানো হয়ে থাকে। এই ডিপোতে জ্বালানি তেল গ্রহণ এবং সরবরাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে। তেলের ওজন, তাপমাত্রা, সরবরাহ সবই পরিচালিত হবে কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার ৭০ লাখ টন জ্বালানির অন্তত ৩০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলে। এসব জ্বালানির বেশির ভাগ বেসরকারি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে পরিবাহিত হয়। এতে কোটি কোটি টাকার তেল চুরিসহ নানা ধরনের অনিয়ম ঘটে। ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ সিস্টেম লস বিপিসি মেনে নেয়। বছর শেষে এটা বিশাল অঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। সিস্টেম লস কিংবা তেল চুরির এই লোকসান থেকে জ্বালানি তেল সেক্টরকে বাঁচাতেই মূলত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
৫০ লাখ টন ধারণক্ষমতার পাইপলাইনে বর্তমানে ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ দেওয়া হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের ডেসপ্যাচ টার্মিনালের স্ক্যাডা মাস্টার কন্ট্রোল স্টেশন থেকেই পুরো পাইপলাইনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা হবে। স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন এবং লিক ডিটেকশন করতে এই পাইপলাইনের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল লাইন সংযুক্ত রয়েছে। ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের ২৪১ কিলোমিটার অংশে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হয়েছে। এটি নগরীর পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত বিস্মৃত। পাশাপাশি গোদনাইল থেকে ফতুল্লা ডিপো পর্যন্ত ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পৃথক ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন সেনাবাহিনীর প্রকৌশলীরা। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৪ আগস্ট সকালে পাইপলাইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করবেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।