
প্রতীকী ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দেড় কোটি টাকার খ-তপসিলভূক্ত সরকারী সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করে দখলের অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে। জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ তৈরি করে এলাকার অস্তিত্বহীন মানুষের নাম ব্যবহার করে এ সম্পত্তি দখলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পেরাব গ্রামের মো. শহিদুল্লাহ বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়,উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বেলাব গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র পালের ছেলে উজ্জ্বল চন্দ্র পাল নামে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ নেন। পরে গত বছরের ১৯মার্চ ২৯৯৯ নং দলিলে পাওয়ার অব এ্যাটর্নীর মাধ্যমে ২৫শতাংশ খ-তপসিলভূক্ত সরকারী নাল জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ সম্পত্তি অর্থের বিনিময়ে ভূমি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে নামজারি করে নেয়। এর আগেই এ সম্পত্তি রেকর্ডীয় মালিক হিসেবে পারুল প্রভা সুন্দরী পাল স্বামী গোপাল চন্দ্র পাল হাল সাং ভারত পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের খ-তপসিলে অর্ন্তভূক্ত হয়। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পালপাড়া গ্রামের উজ্জ্বল চন্দ্র পাল নামের এক ব্যাক্তি আশা লতাকে তার মা সাজিয়ে ওই সম্পত্তি নিজের দাবি করেন। কিন্তু রেকর্ডীয় মালিক পারুল প্রভা সুন্দরী পালকে তার নানি দাবি করেন। প্রকৃত পক্ষে জাতীয় পরিচয় পত্রে আশা লতার মায়ের নাম বকুল রানী পাল। পরে এ সম্পত্তি আমমোক্তার দলিলের মাধ্যমে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. বদরুজ্জামান, নয়ন চন্দ্র নামের এক জমির দালালের যোগসাজসে ইউপি সদস্যের স্ত্রী শাহনাজ আক্তারের নামে হস্তান্তর করেন। তবে আশা লতার মায়ের নাম সম্পদের পর্চার রেকর্ডে প্রভা সুন্দরী পাল কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রে বকুল রানী নামের অন্তর্ভূক্ত আছে। বর্তমানে তারা জীবিত রয়েছেন। তবে আশা লতাকে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশ সনদ নেন উজ্জ্বল চন্দ্র পাল। এছাড়াও ওয়ারিশ সনদে উজ্জ্বল চন্দ্র পালকে একক মালিকানা দেখানো হয়েছে। তার মা আশা লতা পাল, বাবা নারায়ণ চন্দ্র পাল, এক ভাই ও অন্তরা পাল নামের এক বোন রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পালপাড়া গ্রামের ইমরান নামের এক যুবক জানান, সরকারী সম্পত্তি দাবিদার উজ্জ্বল চন্দ্র পালের মা আশা লতা, বাবা নারায়ণ চন্দ্র পাল ও বোন অন্তরা পাল ও আরো এক ভাই চঞ্চল চন্দ্র পাল তারা জীবিত রয়েছেন। তার বাবা নারায়ণ চন্দ্র পাল নবীনগর পৌর এলাকার বড়বাজারে গুড় ব্যবসায়ী।
পেরাব গ্রামের মো. শহিদুল্লাহর দাবি, জমির মূল্য বৃদ্ধির কারনে স্থানীয় দালাল চক্র সরকারী সম্পত্তির ওপর নজর পড়েছে। দেড় কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি ভূয়া ওয়ারিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের সনদ ব্যবহার করে কব্জায় নিয়েছে। সেই সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন।রেকর্ডীয় মালিক পারুল প্রভা সুন্দরী পালের তারা কোন আত্মীয় স্বজন নন।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. বদরুজ্জামান বলেন, সকল কাগজপত্র সঠিক ও আসল দাতার কাছ থেকে এ জমি ক্রয় করে নেওয়া হয়েছে। এখানে কোন প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. কামরুজ্জামান বলেন, সাবেক এক চেয়ারম্যানের প্যাডে এ ওয়ারিশ সনদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। স্মারক ঘেঁটে সনদের তথ্য যাচাই করা হবে।
সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও সাড়া মেলেনি।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সরকারী সম্পত্তি প্রতারণা করে দখলের অভিযোগের কপি এখানো তিনি হাতে পানি। কপি হাতে পেলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।