রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

|

শ্রাবণ ২৫ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্পে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১০ আগস্ট ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্পে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

ফাইল ছবি

পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্পে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অতি বর্ষণের ফলে সেচ প্রকল্পের অভ্যান্তরে পানি বেড়ে অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এখানে মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। 

সোনারগাঁও উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড এলাকায় সরেজমিনে স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অত্র ওয়ার্ডটি সেচ প্রকল্পের আওতায়ভুক্ত। এখানে ৪ হাজার পরিবারে প্রায় ২০ হাজার বসবাসকারী মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এখানে ঘরবাড়িগুলো ২-৩ ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। মানুষের ও গো-খাদ্যের আকাল দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবারের লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরের ভেতরে ইটা ও বাঁশ দিয়ে মাচান বেঁধে বসবাস করছে। কাজকর্মে দেখা দিয়েছে মন্থরগতি।

স্থানীয় ভারগাঁও চৌধুরীপাড়ার ইউসুফ জানান, তিনি জামদানী বুননের কাজ করেন। ঘরের ভিটা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন বুননের করতে পারছেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাবের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাছাড়া গো-খাদ্যের অভাব। মানুষজন নৌকা বা কাপড় ভিজিয়ে হাট-বাজারে ও কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এখানের পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব বিষাক্ত পানি ব্যবহার করলে চুল্কানিসহ ঘাঁয়ের সৃষ্টি হয়।

বাটপাড়া গ্রামের আ. আউয়াল জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ডায়িং কারখানার বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত বিষাক্ত পানি প্রতিনিয়ত সেচ প্রকল্পের প্রধান ক্যানেল দিয়ে নিষ্কাশন করায় এখানের ডোবা, খাল-বিলে পানি জমে থাকে। তখন বৃষ্টি হলে ওসব পানি ফেঁপে গিয়ে স্থানীয় বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়িতে উঠে পড়ে এবং ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। ফলে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। মানুষের রোগবালাই পেটে ব্যাথা, গ্যাস্টিক, অমাশা, সর্দি, ঠান্ডা ও জ্বরসহ দেখা দেয় বিভিন্ন রোগের উপদ্রব হয়।

ভারগাঁও আঞ্চলিক কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম ভূঁইয়া জানান, এখানের একমাত্র কবরস্থানও পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ মারা গেলে দাফন করা দায় হয়ে পড়ছে। 

স্থানীয় সাদীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রহমান সরকার তিনি জানান, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজাহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে তিনি পানিবন্দি সাদীপুর ইউনিয়নের খিদিরপুর, বাটপাড়া, চিরিপাড়া, ভারগাঁও এলাকা পরিদর্শনে আসছেন।

তিনি অনুরূপ অবস্থাই দেখেছেন ব্যক্ত করে বলেন, ১৯৮৪-৮৫ অর্থ সালে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে এ প্রকল্পের পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশনের জন্য যাত্রামুড়ায় সুইচগেট স্থাপন করা হয়। এ সুইচগেটের মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ ত্রুটিযুক্ত তাই এ প্রকল্পের অভ্যন্তরের পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ প্রকল্পের আওতায় ক্যানেলগুলো খনন বা সংস্কার করছেন না। ফলে বৃষ্টি হলেই এখানের বসবাসকারী মানুষগুলো পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এটি পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। পানিবন্দি মানুষের জোর দাবি সেচ প্রকল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ।