ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে কলেজ রয়েছে ১০টি। চলতি বছর কলেজগুলো থেকে দুই হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে কৃতকার্য হন মাত্র ৮৬৫ জন। সবচেয়ে বেশি ফল বিপর্যয় ঘটেছে সোনারগাঁ সরকারি কলেজে। উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজটিতে এবার এক হাজার ৫৪৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৩৭৬ জন।
গত ১৬ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবার উপজেলার কলেজগুলোতে পাসের হার ৩৫.০৫ শতাংশ। কলেজের তুলনায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ফলে কিছুটা এগিয়ে। মাদ্রাসায় পাসের হার ৫৯.৩৫ শতাংশ। হতাশ অভিভাবকরা বলছেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ফল অনেক বেশি খারাপ হয়েছে। ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের অমনোযোগিতা এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, সোনারগাঁর ১০টি কলেজের দুই হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ৮৬৫ জন। অকৃতকার্য হয়েছেন এক হাজার ৬০৩ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন মাত্র ২০ জন। পাঁচটি মাদ্রাসার ১২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। কৃতকার্য হয়েছেন ৭৩ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন দুজন।
টেস্টে ফেল করেও বসেছেন ফাইনালে
সোনারগাঁ সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় বসেন এক হাজার ৫৪৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৩৭৬ জন পাস করেছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন এক হাজার ১৬৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন পাঁচজন।
এবার কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় ৩১৬ জন অংশ নিয়ে কৃতকার্য হন ৮২ জন। মানবিক শাখার ৭৩৫ জনের মধ্যে কৃতকার্য হন ১৭৩ জন। ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৫১৮ জনের মধ্যে ১২১ জন কৃতকার্য হন।
সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, ফল খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) সব বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীকেও ফাইনাল দেওয়া থেকে আটকাতে পারিনি। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করাতে বাধ্য করেছে। কিভাবে আগামীতে ভালো করা যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান তানহার অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকরা কোনোরকমে পাঠদান করেছেন। শিক্ষার্থীরা এ সুযোগে টেবিলমুখী হয়নি।
একই কলেজের কৃতকার্য হওয়া ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী আবরার হাসানের বাবা ফরিদুর রহমান বলেন, দেশের প্রেক্ষাপট খারাপ ছিল। পড়াশোনা তেমন হয়নি। বিগত সরকারের পড়াশোনার নীতিমালা এ
বছর পরিবর্তন হয়েছে। ভালো করেনি বেসরকারি কলেজও
এইচএসসি পরীক্ষায় বারদী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১০ জন কৃতকার্য হয়েছেন। হোসেনপুর এসপি ইউনিয়ন কলেজের ৮৭ জনের মধ্যে ৩৯ জন কৃতকার্য হন। মেঘনা শিল্পনগরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৭ জন পাস করেছেন। সিনহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ১৬৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১০৩ জন। সোনারগাঁ নলেজ কিং কলেজের ৩৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৫ জন পাস করেছেন।
সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১১৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২২ জন কৃতকার্য হয়েছেন। এই কলেজ থেকে একজন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। সোনারগাঁ আইডিয়াল কলেজের ৬০ জনের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ৩৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন একজন। সোনারগাঁ কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজের ২২৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০৫ জন পাস করেছেন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ছয়জন। সোনারগাঁ স্টার ফ্লাওয়ার শাহআলী রফিকুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৪৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৪২ জন কৃতকার্য হয়েছেন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন সাতজন।
সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটিউশন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন ফলে আমরা বিব্রত। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় একেবারে অমনোযোগী হওয়ায় এমন ফল এসেছে। গত বছরের আন্দোলনের পর থেকে পড়াশোনায় তাদের মনোযোগী করতে পারিনি।

