কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ
বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধের ৭টি মামলায় প্রায় তিনমাস কারাগারে থেকে জামিনে বের হয়ে ঘোষিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ৭১ মামলার আসামি কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি গত মহানগর যুবদলের কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
জামিনে বের হয়ে সর্বশেষ রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) ৩ টি হরতাল ও নাশকতার মামলায় আদালতে হাজিরা দেন খোরশেদ। এর মধ্যে একটি নাশকতার মামলায় আদালতে দুই পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বিএনপির ডাকা হরতাল, অবরোধের সময় বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত ৭টি মামলায় প্রায় ৩ মাস কারাভোগ করেন তিনি। গত ১৫ জুন থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাগারে থেকে এসব মামলায় জামিন নিয়ে মুক্ত হন খোরশেদ। তার বিরুদ্ধে শিডিউল ও নন শিডিউল মিলিয়ে প্রায় ৭১ টি মামলা সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর ও ফতুল্লা থানায় রয়েছে। এসব মামলা বহুবার কারাগারে গিয়েছেন তিনি। সকল মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন কাউন্সিলর খোরশেদ।
কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেনের মধ্যে পর পর ৪ বার টানা সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধি। তার সাথে সর্বশেষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা আওয়ামীলীগসহ সকল প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিএনপির হরতাল অবরোধের নাশকতার মামলা থাকায় তার কাউন্সিলরশীপ বাতিল করা হলে ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে রিট করে কাউন্সিলরশীপ ফিরে পান তিনি।
তার ওয়ার্ড ১৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত চাষাঢ়া নগরীর প্রাণকেন্দ্র। এই ওয়ার্ডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যেখানে মহানগর বিএনপি এখন নিয়মিত কর্মসূচী পালন করেন। এসব কর্মসূচীতে সবচেয়ে বড় মিছিল থাকে কাউন্সিলর খোরশেদের। দলীয় পদ পদবি না থাকলেও তার নেতাকর্মীরা বড় মিছিল নিয়ে কর্মসূচীর শুরুতে আসে এবং সবার শেষে যায়।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরে গ্রেফতার হন খোরশেদ। বিএনপি ঘোষিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিকেলে মহানগর যুবদল নগরীর ডিআইটি এলাকা থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ প্রথমে মিছিলে বাধা দেয়। পরে যুবদল নেতা কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় কাউন্সিলর খোরশেদসহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
২০১৩ সাল থেকে দলের সকল হরতাল অবরোধের কর্মসূচীতে নগরীর মূল সড়কে মিছিল করেছেন খোরশেদ। এসময় সকল কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দিলে ও লাঠিচার্জ করলেও পিছপা হননি তিনি। এর মধ্যে গুলিও হয়েছে কয়েকটি মিছিলে। এসব কর্মসূচীতে খোরশেদের পাশে থেকে মহানগর যুবদল নেতা রানা মুজিব, জুলহাসসহ শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন থানার রাজনৈতিক মামলার শিকার হন। এসব মামলায় এখনো খোরশেদসহ সকলে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণের পর সারাদেশের মধ্যে প্রথম রায়ের সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা যুবদল খোরশেদের নির্দেশে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এর মধ্যে বার বার আওয়ামীলীগ থেকে দলে যোগ দিতে ও নানা পদের প্রলোভন দেয়া হলেও সেটি অগ্রাহ্য করে দেন খোরশেদ। তিনি আমৃত্যু পদ পদবি না থাকলেও বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সাথে থাকবেন বলে জানিয়ে দেন।
তার ওয়ার্ডের জামতলায় আওয়ামীলীগের সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বাড়ি। তবুও নেতাকর্মীদের নিয়ে সব সময় চাঙ্গা ও সরব থাকেন খোরশেদ। নিজ বাড়ির সামনে জিয়াউর রহমানের জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশাল দোয়া মিলাদ ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করেন তিনি। এ ছাড়াও জনসম্পৃক্ত কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হিসেবে তিনি পরিচিতি ওয়ার্ডে।
এর মধ্যে বাংলাদেশে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বেও বিএনপির নাম উজ্জ্বল করেন খোরশেদ। বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রাণ ও জনগনের জন্য কাজ করা জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাজের প্রশংসা করেন সকল দলের মানুষ।
তবে এতকিছুর পরও মহানগর বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটিতে নাম আসেনি তার। বাদ পড়েছেন তিনি। তবুও তিনি হতাশ নন দলের জন্য ও জিয়া পরিবারের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন দলের সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমান তার কাজের মূল্যায়ন করবেন।