শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

ভাদ্র ২৯ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে বেহাত সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের দাবি নাগরিক কমিটির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:১০, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে বেহাত সরকারি জমি পুনরুদ্ধারের দাবি নাগরিক কমিটির

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে জনকল্যাণের ব্যবহারের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি রাজউকের অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের যোগসাজসে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন নাগরিক কমিটির নেতারা।

একই সঙ্গে জমিটি উদ্ধারের দাবিও জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির নেতারা। শহরের বালুর মাঠ এলাকায় রাউজক কর্তৃক বিক্রিত ৭৬ শতাংশ পরিমাণ জমি পুনরুদ্ধারের দাবিতে শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে অবস্থান কর্মসূচিতে এ দাবি জানান তারা।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের নেতৃত্বে মাফিয়াচক্র তৈরি হয়েছিল। তারা অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে, রাউজক, সওজ, বিআইডব্লিউটিএ’র জমি আত্মসাৎ করেছে। আমরা এই ভূমিদস্যুতা, লুটপাট থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই।’

রফিউর রাব্বি অভিযোগ করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে ১৮৮১ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ করে। তাদের অব্যবহৃত জমি রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে ভূমিদস্যুদের সাথে আঁতাত করে বিক্রি করে দিয়েছে। রাউজক ১৯৫৮ থেকে ৬৫ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের ২৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে। যার মধ্যে ডিআইটি মার্কেটসহ ৬টি বিপণিবিতান মার্কেট করে ও বাকি জমি পতিত রেখে প্লট করে বিক্রি করে দেয়। ২০০৫ সালে রাউজক পতিত জমিতে ৮১টি প্লট করে টেন্ডার আহ্বান করে। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তারা সেই টেন্ডার বাতিলের ঘোষণা দেয়। ২০০৮ সালে রাউজকের অব্যবহৃত ভূমি ও বঙ্গবন্ধু সড়কের ৬টি বিপণিবিতান ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা। সেই মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাউজক শহরের বালুর মাঠের ৭৬ শতাংশ জমিগুলো বিক্রি করে দেয়।’

রফিউর রাব্বি দাবি করেন, ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী যে কারণে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেটা না হলে অধিগ্রহণকৃত জমি বিক্রি, লিজ দেয়া বা হাত বদল যাবে না। কিন্তু রাউজক এই আইনের তোয়াক্কা না করে ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের কাছে সাড়ে ১৯ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে নূপুর কুমার ভৌমিকের কাছে তিনটি দলিলের মাধ্যমে মোট সাড়ে ৫৬ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। কিছুদিন পর সেই জমি তারা পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের কাছে আবার বিক্রি করে।

খালেদ হায়দার খান কাজল ওসমান পরিবারের সহযোগি এবং একজন রাজাকারের ছেলে উল্লেখ করে তিনি ররিউর রাব্বি বলেন, ‘কাজলের বাবা শান্তি কমিটির চাষাঢ়া শাখার সভাপতি ছিল। সেলিম ওসমান কাজলকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাইফেল ক্লাব ও চেম্বার অব কমার্সে বসিয়েছে।’

ওসমান পরিবারের সহযোগীরা এখনও নারায়ণগঞ্জে ঘাপটি মেরে রয়েছে ও তাদের গ্রেফতারের দাবি করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ওসমানদের টাকা বিদেশে পাচার করার মূল হোতা ব্যাংক কর্মকর্তা লিয়াকত আলী এখনও বহাল আছে। খুনি আজমেরী ওসমান তার বোন জামাতা ইফতেখারের গাড়িতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়েছে। সেই পুলিশ কর্মকর্তা ইখতেখার ও তার ভাই মাহবুব এখনও বহাল রয়েছে। খুনিদের সহযোগী যারা গণহত্যা করেছে এবং এখনও নৃশংসতা চালাচ্ছে তারা কীভাবে বহাল থাকে, সরকার ও প্রশাসনের প্রতি এমন প্রশ্ন তোলেন রফিউর রাব্বি।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উদ্দেশ্যে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘মাফিয়া-গডফাদারদের বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব না। অতি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করুন এবং তাদের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনুন। ওসমান পরিবার ও তাদের সহযোগীরা এখনও কেন গ্রেফতার হয়নি আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই।’

রফিউর রাব্বি বলেন, ‘রাউজকের সাথে আঁতাত করে সরকারের যারা জড়িত, যে মন্ত্রী জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জায়গার অভাবে নারায়ণগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও মানসম্মত চক্ষু হাসপাতাল করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মাফিয়াদের হাতে নারায়ণগঞ্জ জিম্মি থাকতে পারে না। তাই বিভিন্ন সময় লুট হওয়া ভূমি যে কোনো মূল্যে ফেরত আনতে হবে।’ 

ছাত্র জনতার অভুত্থানে শহীদদের রক্তের দিকে তাকিয়ে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রসাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপুর সঞ্চালনায় অবিস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুম, খেলাঘর আসরের সাবেক জেলা সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানি সংকর রায়, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন প্রমুখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ শহরের পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের এজিএম ও হেড অব ব্রাঞ্চ শহিদুল ইসলাম স্বপন সময় সংসদকে বলেন, ‘জায়গাটার মালিক নূপুর কুমার ভৌমিক নামে দুবাই প্রবাসী এক ব্যক্তি ও তার লোকজন। উনি রাজউক থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে জায়গাটা কিনেছিলেন। উনি কেনার বেশ কয়েক বছর পরে জায়গাটা বিক্রি করার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। আমরাও মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল করার জন্য শহরে জায়গা খুঁজতেছিলাম। সেই বিজ্ঞপ্তির সূত্রে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করি। তখন তার সাথে আমাদের একটা সমঝোতা হলে আমাদের এমডি স্যার রাজউকের সাথে যোগাযোগ করেন। কারণ রাজউকের কোনো জায়গা কিনতে হলে তাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তখন রাজউক অনুমতি দেয় এবং সেই অনুমতির ভিত্তিতে আমরা ফি জমা দিয়ে জায়গাটা ক্রয় করি। পরবর্তীতে আমরা ক্রয় করা ওই জায়গায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করি।’

পপুলার ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের হেড অব ব্রাঞ্চ আরও বলেন, ‘আমরাতো রাজউক থেকে জায়গাটা কিনিনি। আমরা কিনেছি তৃতীয় পক্ষ থেকে। জায়গাটা দীর্ঘ সময় এর মালিক নূপুর কুমার ভৌমিকের দখলে ছিল। উনি বিক্রি করবেন বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেটা দেখে আমরা কিনেছি। এখানে আর যাদের কথা (ওসমান পরিবার) বলে হচ্ছে তাদের কেউই জায়গাটি বেচাকেনার ব্যাপারে ইনভলব ছিল না। আজকে যারা বলছে, আমরা রাজউক থেকে জায়গাটা কিনেছি তারা ভুল বলছে। এটা সম্পূর্ণ অসত্য।’