বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদী মসজিদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২৬ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৪:০৬, ২৬ মার্চ ২০২৩

মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদী মসজিদ

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গোয়ালদি এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্য ও প্রাচীন স্থাপত্য-কীর্তির জন্য বিখ্যাত এ মসজিদটি।

মসজিদের পাশেই অবস্থিত ঐতিহাসিক পানাম নগরী। এটি স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে নির্মিত। সোনারগাঁয়ে হোসেন শাহর রাজত্বকালের যেসব শিলালিপি পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে এ শিলালিপি অন্যতম। মসজিদটি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে সবসময়।

পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে অলংকরণে সমৃদ্ধ তিনটি মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ততর এবং কালো পাথরে খোদাইকৃত ফুলেল ও আরব্য নকশায় সৌন্দর্যমণ্ডিত। পার্শ্ববর্তী মিহরাব দুইটি পোড়ামাটির ফুলেল ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত।

মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে পাথর এবং ইটের ওপর আরব্য অলংকরণ লক্ষণীয়। দেয়ালগুলোর প্রশস্ততা ১ দশমিক ৬১ মিটার। চার কোণায় সুলতানি রীতিতে তৈরি চারটি খিলান-স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে (এখন ইট দিয়ে ভরাট করা) একটি করে খিলানাকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে। একমাত্র গম্বুজটির ভিত্তি চারকোণের চারটি স্কুইঞ্চ খিলানের উপর। ছাদের ভার রক্ষার জন্য মসজিদটির ভেতরে কালো পাথরের অলংকৃত স্তম্ভও রয়েছে।

মসজিদের শিলালিপির তথ্য অনুযায়ী সৈয়দ আশরাফ আল-হোসাইনির পুত্র সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ-এর শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯) এটি নির্মিত হয়। জানা যায়, ৯২৫ হিজরির ১৫ শাবান মোতাবেক ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে মোল্লা হিজাবর আকবর খান এটি নির্মাণ করেন। প্রসঙ্গত আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে বাংলার শিক্ষা, শিল্প ও সাহিত্য উৎকর্ষ লাভ করেছিল।

মসজিদটি অনেকদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। মসজিদের ইতিহাসসংবলিত একটি সাইনবোর্ড প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর টাঙিয়ে রেখেছে। তাতে লেথা আছে, মোগল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের আগে সোনারগাঁয়ে বার ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ ও এর আগের স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল। রাজধানী ও রাজসভার জন্য মনোরম ইমারত ছাড়াও মুসলিম শাসকেরা এখানে মসজিদ, খানকা ও সমাধি নির্মাণ করেন। তার মধ্যে এ মসজিদ অন্যতম।

জানা গেছে, সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন পুরাকীর্তি পরিদর্শনে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এ মসজিদ পরিদর্শন না স্বাভাবিকত কখনোই যান না। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি সুলতানি আমলের গৌরবোজ্জ্বল সাক্ষী।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বরাতে জানা যায়, সরকার ১৯৭৫ সাল থেকে এ মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য সার্বিক বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ইতিহাস বিকৃত না হওয়ার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের ইতিহাস সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে।