সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে জৌলুস হারালেও পালিত হবে ঐতিহ্যের হালখাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে জৌলুস হারালেও পালিত হবে ঐতিহ্যের হালখাতা

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে উকিলপাড়া, থানা পুকুরপাড় মসজিদ মার্কেটসহ পাইকপারি থান কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক সময় বেশ আয়োজনে হালখাতা উৎসব পালিত হলেও এখন আর সেই জৌলুস নেই। তবে জৌলুস হারালেও শুধুমাত্র ঐতিহ্য রক্ষায় পালিত হবে হালখাতা উৎসব।

বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। আর বর্ষবরণের অন্যতম উৎসব হলো ঐতিহ্যবাহী হালখাতা। এদিন ব্যবসায়ীরা লাল মলাটের নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসেব শুরু করেন। বিশেষ করে তারা এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ, বছরের প্রথম দিনটিতে ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের মধ্যে দেনা-পাওনার হিসেব হয়। দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও গভীর সম্পর্কের মূল ভিত্তি এই হালখাতা।

শুধু এসবেই নয়, হালখাতা সৌজন্য প্রকাশের একটি মাধ্যম। পয়লা বৈশাখে ছোট ব্যবসায়ীরা মহাজনদের পাওনা পরিশোধ করেন। বাঙালির চির চেনা মিলনমেলার উৎসব হালখাতা উদযাপনের দৃশ্য কার্যত দেখা যায় না। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও পারস্পরিক আস্থার সংকটে ঐতিহ্যবাহী এ সৌহার্দ্য অনেকটাই রং হারিয়েছে।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জৌলুস না থাকলেও জেলার ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্য হিসেবে হালখাতা পালন করেন। মূলত ব্যবসায়ীরা অতীতের মতো এখন বকেয়া পরিশোধ না করায় এ আয়োজনও পিছিয়ে পড়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও রোজা থাকায় গ্রাহকরা হালখাতা অনুষ্ঠানে তেমন অংশ নেবেন না। যে কারণে হিসেবের খাতা ফাঁকা থাকার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) শহরের উকিলপাড়া, দেওভোগ, থানা পুকুরপাড় মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরেজমিন ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোজা ও ঈদ মাত্র দুদিন আগে শেষ হওয়ায় এ বছর পয়লা বৈশাখ নিয়ে আলাদা কোনো আয়োজন করেনি ব্যবসায়ীরা। অথচ এ সময় ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট পরিষ্কার, রং করাসহ বিভিন্ন সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। ব্যবসায়ীদের মনে নেই কোনো উৎসবের আমেজ। টালি খাতা, পাটি ব্যবসায়ীদের হাঁক ডাকও চোখে পড়েনি। হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ পত্র ছাপানো, মিষ্টির অর্ডারও কমে গেছে। মোট কথা হালখাতা নিয়ে কোনো উৎসবের আমেজ নেই এ বাজারগুলোয়। মূলত ঐতিহ্য রক্ষায় নামেমাত্র হালখাতা করবেন ব্যবসায়ীরা।

শহরের স্বর্ণপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সাগর ঘোষ বলেন, এ বছর পয়লা বৈশাখ বা হালখাতা উদযাপন নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন নেই। রোজা ও ঈদ হওয়ায় লোকজন পরিবারের চাহিদা মেটাতেই অর্থ ব্যয় করেছেন প্রায় সবাই। বকেয়া নিয়ে কম ভাববে তাই আয়োজন নেই বললেই চলে। তবে ঐতিহ্য হিসেবে পহেলা বৈশাখের দিন দোকানে গণেশ পূজাসহ নতুন খাতা খোলা হবে। নতুন খাতা খোলা হলেও খাতা ফাঁকাই থেকে যাবে। গত তিন বছরের বকেয়া উঠছে না। এভাবে চললে পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে ব্যবসায়ীরা।

আরেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশুতোষ বলেন, এ মাসটির জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করি। পয়লা বৈশাখে আমরা হালখাতা অনুষ্ঠান করি; নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসাব তুলি। হালখাতার দিন সকালে গণেশ পূজার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয়। সারাদিন গ্রাহদের মিষ্টি মুখ করিয়ে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান শেষ হয়। তবে বৈশাখ মাসব্যাপী আমাদের গ্রাহকরা আসেন তাদের পুরনো লেনদেনের হিসাব শেষ করতে। সারা বছর যারা বাকি স্বর্ণালঙ্কার কেনেন তারা বৈশাখের প্রথম দিন প্রায় সব বকেয়া পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার ঈদ হওয়ায় গ্রাহকের সাড়া কম। সেজন্য হালখাতার আয়োজনও ছোট করে করেছি। মানুষের কাছে টাকা নেই। গত চার বছর ধরে বকেয়া তুলতে পারছি না। এ বছরও বকেয়ার খাতা ফাঁকা থেকে যাবে।

সর্বজনীন উৎসব হিসেবে হালখাতা বাংলা নববর্ষের প্রাণ। ইতিহাস অনুযায়ী, ১৫৮৪ সালে সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই এর প্রচলন হয়। পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায় সেটিই হালখাতা। অতীতে জমিদারকে খাজনা দেওয়ার অনুষ্ঠান হিসেবে পুণ্যাহ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্যমতো ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ায় পুণ্যাহ বিলুপ্ত হয়েছে।