
ফাইল ছবি
যখন মাধ্যমিকে তোলারাম কলেজে ভর্তি হই তখন ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সর্ব প্রথম নগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কে জানি। শিক্ষার কারিগর হিসেবে খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি কেবল একজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নন, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি নিজের নিরলস প্রচেষ্টা এবং দূরদর্শিতা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। আজ ১৮ই আগস্ট, এই মহান ব্যক্তির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সবচেয়ে বড় অবদান হলো শিক্ষাকে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ১৯৩৭ সালে মাত্র পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে তিনি যে ‘নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীর ক্ষমতায়নে তার এই প্রচেষ্টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন কলেজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন হাল না ছেড়ে তিনি আবার এর পুনরুজ্জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং কিছু গুণী মানুষের সহযোগিতায় কলেজটি আবার প্রাণ ফিরে পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তোলারাম বসরাজের আর্থিক অনুদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে কলেজের নামকরণ করেন তোলারাম কলেজ। এই নামকরণের মধ্যে তার বিনয় ও কৃতজ্ঞতার এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি নিজের নাম বা খ্যাতিকে বড়ো করে না দেখে, দাতার প্রতি সম্মান জানানোকেই শ্রেয় মনে করেছিলেন। এই নামকরণের পেছনে ছিল তাঁর বিনয় ও কৃতজ্ঞতা—দাতার প্রতি সম্মান জানানো।
তবে খগেন্দ্রনাথের অবদান শুধু তোলারাম কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বুঝেছিলেন যে সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নারায়ণগঞ্জ ল কলেজ’, যা আইন বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি, সাধারণ জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘গণবিদ্যা নিকেতন’। এই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই প্রমাণ করে, তিনি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য শিক্ষার বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন।
খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, একজন মানুষ তার কাজের মাধ্যমে কীভাবে সমাজের কাঠামো বদলে দিতে পারে। তিনি ছিলেন একজন নীরব কারিগর, যিনি কোনো প্রচারের আলোয় আসতে চাননি, শুধু কাজ করে গেছেন। আজ তার প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজেদের এবং দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে ভূমিকা রাখছে। তার দেখানো পথ অনুসরণ করে আমরাও যেন সমাজের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হই।
খগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এক চিরন্তন অনুপ্রেরণার নাম। তার প্রয়াণ দিবসে এই মহান শিক্ষানুরাগীর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
-আকাইদ আরিফুল
এমবিএ হিসাববিজ্ঞান
(জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)