
ফাইল ছবি
বেকারদের কর্মসংস্থান ও চাকরি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে রীতিমত আলোচনায় এখন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভিডিওটা প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে বেকারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস।
শিক্ষার্থী, শিক্ষানুরাগী ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এখনই এ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নতুবা বেকারত্ব যেমন বাড়বে তেমনি ক্রমশ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।
গত ২২ আগস্ট রূপগঞ্জের তারাব বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের এক উঠান বৈঠকে দিপু ভূঁইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ বছর রূপগঞ্জের মানুষ নেতৃত্ব দেয় না বিধায় এখানকার মানুষের দুঃখ বুঝে নাই। রূপগঞ্জের অনেক কারখানা হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়ে যাবেন কিন্তু রূপগঞ্জের মানুষ চাকরি পাবে না এটা হতে পারে না। রূপগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিবেন না, কর্মসংস্থান করবেন না এটা মানা হবে না। আমি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা করবো যেন রূপগঞ্জের মানুষ আগে চাকরি পায়।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সাল হতেই রূপগঞ্জে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী। তার আদি নিবাস কালীগঞ্জে। পরে তিনি ঢাকাতে স্থানান্তর হন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তার নির্বাচনী এলাকা কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ইস্কাটন এবং মগবাজার থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে রূপগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়ার দূরত্ব সৃষ্টি হলে গাজীর উত্থান ঘটে। রূপগঞ্জের রূপসীতে একটি তৈরি বাড়ি কিনে সেখানকার নিবাসী হন। এর পর থেকেই শুরু হয় রাজনীতি। ২০০৮ হতে ২০২৪ পর্যন্ত টানা এমপি হয়ে এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ নেন। পিএস হন পাবনার এমদাদুল হক। কিন্তু আদৌ ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি স্থানীয়দের। কারণ রূপগঞ্জে গাজীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হলেও পারিবারিক কিংবা কোন ধরনের শিকড় ছিল না।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাসরিক হোসাইন বলেন, রূপগঞ্জের সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার কারখানা। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেও রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানকার মানুষ সহজেই চাকরি পায় না বিভিন্ন কোম্পানিতে। এ কারণে আমাদের মধ্যেও কিছুটা হতাশা রয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে নিজের এলাকাতে চাকরি করতে পারলে ভালো হতো।
রূপগঞ্জে দাউদপুর পুটিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘আগে এখানে এমপি ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি এলাকার স্থানীয় না। এ কারণে তিনিও স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থায় উদ্যোগী ছিলেন না। ফলে এখানকার মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা চেষ্টা করবো এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের মধ্যে রূপগঞ্জ এখন একটি উর্বর জায়গা। এখানে প্রচুর কল কারখানা ও দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান জড়িত। কিন্তু অনেক মালিক এখানকার স্থানীয়দের নানা অজুহাতে চাকরি দিতে চায় না বিধায় অনেকেই রূপগঞ্জ ছেড়ে অন্যত্র ছোটাছুটি করেন। বিপরীতে এখানকার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। উদ্যোগ নিয়ে এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থান করা গেলে রূপগঞ্জ আরো সমৃদ্ধ হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গার্মেন্টস ও সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এম এ শাহীন, শুধু রূপগঞ্জ না পুরো জেলাতেই স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের একটা অনীহা দেখা দেয়। কারণ তাদের ধারণা থাকে যে স্থানীয়রা কারখানায় থাকলে বিশৃঙ্খলা করবে। কিন্তু এটা সত্য না। বরং স্থানীয়রা থাকলে বহিরাগতরা ঝামেলা করতে পারে না। স্থানীয়দের চাকরি না দিয়ে সামাজিকভাবে একটি বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।