সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

|

ভাদ্র ২৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাঙা ছাদ বাঁশ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাঙা ছাদ বাঁশ দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা!

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ছাদ ধসে পড়ায় ভবনটির ওপরের তলাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও নিচতলায় ঝুঁকির মধ্যেই চলছে পাঠ দান।

নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে বছরের পর বছর ধরে আশ্বাস দেয়া হলেও এর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ ব্যাপারে আবারও গতানুগতিক আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক।

স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলে তৃষাণকে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পৌঁছে দিয়েও বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন না মা তৃষা ঘোষ। টানা তিন চার ঘণ্টা রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। প্রতিনিয়ত ভয় ও আতংক তাড়া করে তাকে। তাই ছুটির আগ পর্যন্ত স্কুলের জানালার ফাঁকফোঁকর দিয়ে ছেলের প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখেন এই নারী।

তৃষা ঘোষ বলেন, ‘ধসে পড়া ছাদের নিচে বাঁশ দিয়ে ঠেস দয়ে রাখা হয়েছে। তাই আমরা ভয়ে থাকি কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে ছুটি হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। ছেলেকে না নিয়ে বাসায় যাই না।’

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় জরাজীর্ণ দুই তলা একটি ভবনেই ২৬ নম্বর ও ২৭ নম্বর লক্ষ্মীনারায়ণ বালক-বালিকা সরকারি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাত্র সাতটি শ্রেণিকক্ষে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

কয়েকজন শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালে ভূমিকম্পে ওপরের তলার ক্লাশ রুমগুলোর ছাদের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়লে ভবনটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ও নড়বড়ে হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবারও ভূমিকম্পে পর্যায়ক্রমে ছাদ, বারান্দা ও একমাত্র সিঁড়ির নিচে ফাটল দেখা দিলে খসে পড়তে থাকে আস্তর ও পলেস্তারা।

সবশেষ ২০২৩ সালে সংকীর্ণ সিঁড়িটির মূল ধাপে ফাটল ও দ্বিতীয় তলার আরও দুটি কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়লে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সদর উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় তলার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে সারি সারি বাঁশ দিয়ে দ্বিতীয় তলার ছাদের ধস ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

তখন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির নিচতলায় দুইটি কক্ষে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি এবং পাশের লক্ষীনারায়ণ জিউর আখড়া মন্দিরের অফিস কক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ভবনটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে শিশু সন্তানদের স্কুলে দিয়েও ভয় এবং আতংকে থাকেন তাদের অভিভাবকরা। এছাড়া মন্দিরে প্রতিনিয়ত পূজা অর্চনা, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও ঢাক-ঢোলের উচ্চ শব্দের কারণে অফিস কক্ষে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী শিক্ষা কার্যক্রমও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নানা ভোগান্তিতে রয়েছেন শিক্ষক ও কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থার সুস্থ পরিবেশ হারিয়েছে বিদ্যালয় দুটি। যে কোনো সময় পুরো ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

বিদ্যালয় দুটির কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা সুন্দর পরিবেশে সুন্দর অবকাঠামোর একটি সুন্দর বিদ্যালয় চাই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি পুরনো ভবনটি ভেঙে আমাদের বিদ্যালয়টি নতুন ভবনে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হোক।’

২৭ নম্বর লক্ষীনারায়ণ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন নাহার সময় সংবাদকে বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও সবশেষ চলতি বছর ২০ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আবেদনও করেছি। গত দশ বছরে যতজন ডিসি এসেছেন সবার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি। গত দশ বছর ধরে আমাদের শুধু আশ্বাসই দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আমরা আর কত কাল অপেক্ষায় থাকব জানি না।’

তবে বিদ্যালয় দুটির নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে আগামী বছর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন আমরা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠয়েছি। আগামী উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করি আগামি প্রকল্প-৫ এ বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আগামীতে যদি প্রকল্প নেয়া হয় তার জন্য আমরা এটি লিস্টে রেখেছি। যাতে প্রকল্প নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় এনে দ্রুত ভবন নির্মাণ করা যায়।’

ভবনটির ওপরের তলা ধসে পড়ার পর থেকে বিদ্যালয় দুটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতি বছর কমছে। বর্তমানে বালক ও বালিকা শাখায় অধ্যয়ন করছে ৬৫০ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ২ জন প্রধান শিক্ষক, ১৪ জন শিক্ষক ও একজন দপ্তরি কর্মরত আছেন।