বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫

|

ভাদ্র ১১ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

না.গঞ্জের মহাসড়কে অনিয়মে বাড়ছে দুর্ঘটনা, আট মাসে নিহত ২০

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২২:২০, ২২ আগস্ট ২০২৫

না.গঞ্জের মহাসড়কে অনিয়মে বাড়ছে দুর্ঘটনা, আট মাসে নিহত ২০

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের ঢাকা–চট্টগ্রাম (এন-১) ও ঢাকা–সিলেট (এন-২) মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। 

চলতি বছরের আট মাসে মহাসড়ক দুটির নারায়ণগঞ্জ অংশে প্রায় ২০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন গুরুতর আহত হয়েছেন ৫৫ জনেরও বেশি মানুষ।

মহাসড়কে ট্রাক বাসের বেপরোয়া গতি, মহাসড়কে নিষিদ্ধ তিনচাকার প্রবেশ, বর্ষায় সড়কের গর্ত, খানাখন্দ এবং ফুটপাত ও সড়ক দখলকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল ঝুঁকি হিসেবে শনাক্ত করেছে। 

ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত অংশে বর্ষার টানা বৃষ্টিতে সোনারগাঁ এলাকায় ছোট বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কটির প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা ‘ঝুঁকিপূর্ণ করিডরে’ রূপ নিয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজটও। 

সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট বিকেলেও মহাসড়কের এই সেকশনে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। চিটাগাং রোড এলাকায় মহাসড়কের পাশের চায়ের দোকানদার আবুল কালাম জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে এই জায়গায় যান চলাচল প্রায়ই ধীরগতি দেখা যায়। প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে চিটাগাং রোড, কাঁচপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্টে মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন যানজট বাড়ছে তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। 

অন্যদিকে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ভুলতা থেকে গোলাকান্দাইল হয়ে গাউছিয়া পর্যন্ত অংশে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত রাখতে ৩১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত টানা উচ্ছেদ অভিযান চলে। প্রশাসনের দাবি, দখল, হকারি ও অনিয়মিত পার্কিংয়ের কারণেই এ সেকশনে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং ধীরগতির দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ করা হলেও কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে আগের রুপে ফিরে যায় মহাসড়কটি। এর ফলে এই এলাকাটিতে যানজট লেগেই থাকছে। প্রায়ই এখানে ঘটছে দুর্ঘটনা। 

বছরের শুরুতেই, ১ জানুয়ারি, রূপগঞ্জে পৃথক দুইটি দুর্ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। ৭ ফেব্রুয়ারি কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম প্রান্তে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। হাইওয়ে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই এলাকায় থ্রি-হুইলারের প্রবেশই ছিল দুর্ঘটনার বড় কারণ। 

এছাড়াও ১১ মার্চ সোনারগাঁয়ের আশারিয়ারচর ব্রিজে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় একটি মালবাহী লরি। এতে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত এবং আরেকজন গুরুতর আহত হন। ৯ আগস্ট রাতে কাঁচপুর সেতুর কাছে ট্রাকচাপায় ১০ বছরের এক স্কুলশিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ১২ আগস্ট সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মিডিয়ান ডিভাইডারে উঠে উল্টে গেলে অন্তত তিনজন আহত হয়। ওই সময় অফিস যাত্রীদের জন্য দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

বর্ষার সময় গর্ত খানাখন্দে ভরা সড়ক ও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বাস চালকেরা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস চালক অমিত হাসান বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও রাস্তায় বের হলে এটা যে নিষিদ্ধ তা বোঝার উপায় থাকে না। রাস্তা তাদের দখলে। এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি মহাসড়কে ফুটপাত ও সড়কে হকার ও অবৈধ দোকান, বাজারও যানজট ও দুর্ঘটনার বড় কারণ। 

নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায় অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল ও হকারির কারণে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফলে হঠাৎ ইউটার্ন বা রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনা বাড়ে। 

অন্যদিকে কাঁচপুর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যন্ত এলাকায় নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার চলাচলও দুর্ঘটনার হার বাড়াচ্ছে। আর সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের পূর্বপ্রান্ত থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত গর্ত ও ধসে পড়া রাস্তা বর্ষার সময় যাত্রী ও চালক উভয়ের জন্য ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হচ্ছে।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর–মেঘনা এবং রূপগঞ্জের ভুলতা–গোলাকান্দাইল সেকশনে জরুরি ভিত্তিতে গর্ত মেরামত, রাস্তার রাটিং কেটে ফেলা, রাম্বল স্ট্রিপ এবং মিডিয়ানে রিফ্লেকটিভ ডেলিনিয়েটর বসানো হবে পাশাপাশি মহাসড়ক এলাকাশ থ্রি-হুইলার, অবৈধ পার্কিং ও হকারি নিয়ন্ত্রণে দৈনিক জিরো-টলারেন্স চেকপোস্ট ও অব্যাহত টোয়িং কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, মহাসড়কের ভাঙা অংশগুলো মেরামতে কাজ চলমান রয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছে আমাদের চাষাঢ়া হয়ে পঞ্চবটী-পোস্তগোলা রাস্তাটার তারা টেন্ডার করবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কাজ শুরু হবে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভুলতা এলাকায় যে গর্তগুলো রয়েছে সেগুলোও আমরা মেরামত করে দিচ্ছি। মদনগঞ্জ থেকে মদনপুর রাস্তাটাও আমরা মেরামত করছি। বিষয় হচ্ছে এ রাস্তাটায় যে লোড ক্যাপাসিটি সেই লোড ক্যাপাসিটি নিয়ে রাস্তাটা তৈরি হয়নি। আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছে রাস্তাটা নতুন লোড ক্যাপাসিটি অনুযায়ী তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ চলমান থাকবে।

কাঁচপুর থানা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনার কারণে অবাধ যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এর পাশাপাশি থ্রী হুইলারের চলাচলও যানজটের অন্যতম কারণ। মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচলের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।  এছাড়াও আইন না মানার প্রবনতাও এসকল দুর্ঘটনায় জন্যে দায়ী। রাস্তায় চলাচলের সময় অনেক সময়ই ড্রাইভাররা ট্রাফিক আইন মানে না। পথচারীরাও ফুট ওভার ব্রিজ ব্যাবহার না করে রাস্তা দিয়ে পারাপার করে। এর ফলে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটে।