
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসতবাড়ি অগ্নিদুর্ঘটনায় বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ায় জনতার তোপের মুখে পড়েছেন আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মীরন মিয়া। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা ভূমি অফিসের পিয়ন রেজাউল করিমও জনতার তোপের মুখে পড়েন। এরপরে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ঘটনাস্থলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট সকলেই ঘটনা বিষয়ে উদাসিন বলে অভিযোগ জানান দগ্ধদের স্বজন ও এলাকাবাসী। বাড়িটিতে এর আগেও দুবার গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবু কর্তৃপক্ষ ও বাড়ির মালিকের টনক নড়েনি। ফ্রিজের কম্প্রেসার ঠিক থাকলেও ফায়ার সার্ভিস গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য দিয়েছিল বলে অভিযোগ স্বজন ও এলাকাবাসীর।
দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শণে আসেন নারায়ণগঞ্জ তিতাসের ইমার্জেন্সি একটি দল। তারা পেয়েছেন গ্যাসের আলামত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের সহকারী ম্যানেজার রুহুল আমিন। তিনি জানান, পরীক্ষা করে গ্যাসের আলামত পাওয়া গেছে। এখনো গ্যাসের গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিস্ফোরণ গ্যাস থেকে হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। তবে লিক কোথায় হয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাহেরা বেগম (৬৫) নামে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২। গতকাল সোমবার দুপুরে তাহেরা বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছেন তাহেরা বেগমের মেয়ের জামাই তানজিল ওরফে তাঞ্জু।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি অফিসের পিয়ন রেজাউল করিম। এসময় তিনিও জনতার তোপের মুখে পড়েন। তিনি জানান, অফিসের নায়েব হাবিবুর রহমান আমাকে বিস্ফোরণ স্থলে পাঠিয়েছেন। হাবিবুর রহমান বলেন, ইউএনও তাছলিমা শিরিন আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। আমি যেতে না পারায় রেজাউল করিমকে পাঠাই।
ইউএনও তাছলিমা শিরিন বলেন, জেলা প্রশাসক থেকে আমাকে ঘটনাস্থলে যেতে বলা হয়েছিল। তাই আমি সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি অফিসের নায়েবকে যেতে বলি। আসলে এটা সিটি করপোরেশনের আওতায়। তাই বিষয়টি নিয়ে আগাইনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, ইউএনওকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছিলাম। যেহেতু এটা সিটি করপোরেশনের আওয়ায়, তাই পরে আমি সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, বিষয়টি তারা দেখবে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ও সহকারি প্রকৌশলী বিপ্লব বিশ্বাসকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার দায়িত্ব দিয়েছি। তারা পরিদর্শন করে আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে জনতার রোষের মুখে পড়েন আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মীরন মিয়াসহ ফায়ার সার্ভিসের লোকজন। তিতাস গ্যাসের লিকেজ থেকে অগ্নিদুর্ঘটনায় বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ হলেও ফায়ার সার্ভিস গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে এই অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমকে ভুল তথ্য দেয়ায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তোপের মুখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে পরিদর্শনে এসে জনতার রোষের মুখে পড়েন আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মীরন মিয়া বলেন, শুক্রবার দিনগত গভীর রাতপ আগুন নিয়ন্ত্রণ করে তাৎক্ষণিক গ্যাসের কোন আলামত না পেয়ে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ বলে ধারণা করেছিলাম। পরদিন সকালে এসে দেখি বাড়ির দুটি কক্ষই তালাবদ্ধ। তখন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলাম বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ হতে পারে। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে বাড়ির লোকজনের উপস্থিতিতে কক্ষের ভেতর গিয়ে দেখি ফ্রিজের কম্প্রেসার ঠিক আছে। তখন উপস্থিত লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা নিশ্চিত করেছেন বিস্ফোরণের কারণ নির্নয় করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
দগ্ধ হাসানের ভাগিনি জামাই পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া ইব্রাহীম বলেন, ঘটনার পর নিকটতম কয়েকজন প্রতিবেশীসহ আমরা সবাই দগ্ধদের নিয়ে হাসপাতালে চলে যাই। তাই গণমাধ্যমকে সঠিক কারণ জানাতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কারণ নিশ্চিত না হয়েই ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ভুল তথ্য দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে বিস্ফোরণ হয়েছে বাড়ির নিজ দিয়ে যাওয়া তিতাসের গ্যাস লাইনের লিকেজ দিয়ে বের হয়ে জমে থাকা গ্যাস থেকে। ঘটনার ৩ দিন পর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মীরন মিয়া এসেছেন তদন্ত করতে। তিনি আগে ভুল তথ্য দেওয়ায় লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাকে ঘিরে ধরেন। আমি সর্বাত্বক চেষ্টা করে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করি।
প্রতিবেশী মো. সেলিম মুন্সি বলেন, দুটি পরিবারের ৯ জন লোক দগ্ধ হয়েছে। এক মাসের শিশুটি মারা গেছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কা জনক। ৩ তিন হয়ে গেল এখনো বিস্ফোরণের সঠিক কারণ গোপন রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। দিনমজুর দুটি পরিবারের সবাই দগ্ধ হয়েছে। অথচ সরকারি সংশ্লিষ্ট সবাই ঘটনাটি বিষয়ে উদাসিন আচরণ করছেন। এর কাগেও দুবার বাড়িটিতে গ্যাস বিস্ফোরণ হয়েছে। ঘটনার ৩ দিন হয়ে গেল অথচ বাড়ির মালিক আসেননি। কোন খবর পর্যন্ত নেয়নি। বাড়ির মালিক জাকির খন্দকার ঢাকায় থাকেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মিজমিজি পূর্বপাড়া জাকির খন্দকারের আধাপাকা বাড়িতে শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ৩ টার বিস্ফোরণ গটে। এতে আগুন ধরে গিয়ে দুটি পরিবারের নারী শিশুসহ ৯ জন দগ্ধ হয়। তার মধ্যে চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত রোববার সকালে ১ মাসের এক শিশু ও সোমবার তাহেরা বেগম (৬৫)
মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৭ জন চিকিৎসাধিন আছেন।