বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলরের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২১:৩২, ৫ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ০৪:৩০, ৬ মার্চ ২০২৩

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলরের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের প্রথম স্ত্রী সাদিয়া নিঝুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এর আগে নিঝু সংবাদ সম্মেলন করে তার স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছিলেন।

রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে শহরের চাষাঢ়া রেললাইন থেকে নিঝুর রক্তাক্ত মরাদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এ রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

পরিবারের দাবি, ছাদে হাঁটতে গিয়ে সেখান থেকে হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অথবা কোনভাবে কিছু একটা হয়ে সে মারা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ফরহাদ জানান, ময়নাতদন্তের পর বুঝা যাবে ঠিক কি কারণে তিনি মারা গেলেন। 

এদিকে এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, নিঝু তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এর মাঝে তিনি একবার স্বামীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেন। সেই মানসিক বিপর্যস্ততার কারণেই আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। 

এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে নানা বিষয়ে অভিযোগ করেন নিঝু।

সাদিয়া নিঝু বলেছিলেন, ২০০৭ সালে আমার সঙ্গে শাহজালাল বাদলের বিয়ে হয়। কিন্তু তিনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। আমাদের একমাত্র ছেলে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে হয়েছে। কারণ বাদল সন্তানদানে সম্পূর্ণ অক্ষম। তিনি আমার অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তার চাচা, চাচাতো ভাই কাউকে সে প্রাধান্য দেয় না। তার মা ৪৫ দিন ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে,  সে তার কোনো খরচ দেয়নি। বাদল মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দুই বিয়ে করেছে। তার মা ৭ বছর ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। আমার প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সে টালবাহানা শুরু করে। সেসময় থেকে তার ফোন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়েটিং থাকতো, বাসায় থাকতো না। আমার বাচ্চাটা খুব অসহায়। ১০ বছর ধরে আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার অন্যায় কি আমি জানতে চাই। যেহেতু সে জনপ্রতিনিধি, আমি জানতে চাই আমার সন্তানের দোষ কি?

তিনি আরও বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে। আমি জানতে চাই আমার সন্তানকে কেন এ বাসায় আসতে দেয়া হচ্ছে না। আমি কেন প্রতারিত হচ্ছি। আমার দুটি সন্তান মারা যাওয়ার পর এটা আমার একমাত্র সন্তান। আমরা অসহায়, আমাদের কোনো খরচ সে দিচ্ছে না। আমি বাসায় আসার পর থেকে সে আমার ফোন ধরে না। আর বাসায়ও আসে না। আমি এ বিষয়ে মামলা করবো, আইনগত ব্যবস্থা নেবো। আমি চাই সমাজের সকলে আমার পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করুক। 

তবে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সেসময় সাংবাদিকদের জানান, নিঝু নেশাগ্রস্ত। তাকে তার সুস্থতায় রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হবে। তার বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। 

এলাকাবাসী জানায়, সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নুর হোসেনের ভাতিজা কাউন্সিলর বাদলের ৩ থেকে ৪টি স্ত্রী রয়েছে। কোনো স্ত্রী তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুললে ওই স্ত্রীকে কখনো পাগল, কখনো মানসিক অসুস্থ, কখনো নেশাগ্রস্ত বলে চালিয়ে দেয়।

নিহতের মা ডালিয়া হায়দার জানান, সকালেও আমার সাথে সে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। বললাম শসা খাও পেপে খাও, বলে এগুলো খেলে মোটা হয়ে যাবে। আমরা একসাথেই ছিলাম। পরে আমি নিচে গেলাম, ও বলল ছাদে একটু হাঁটতে যাবে। এর কিছুক্ষণ পর ছাদের কিনারে যাওয়ার পরেই সে হয়ত পড়ে যায়। গতকালও ও আমাকে বলেছিল আম্মু আমি ছাদ থেকে পড়ে যেতে নিয়েছিলাম। পারিবারিকভাবে কোন ঝগড়া বা কোনকিছু হয়নি। ওর হাই প্রেশার হাই ডায়বেটিস, এখন কি হয়েছে বলতে পারছিনা। 

এ ব্যাপারে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল জানান, আমি আমার অফিসে কাজ করছিলাম। তখনই আমার শাশুড়ীর ফোন আসে। উনি বললেন তুমি তাড়াতাড়ি আসো, নিঝু ছাদ থেকে পড়ে গেছে। ওর সাথে কোন পারিবারিক কলহ ছিল না। এই চার পাঁচদিন আগেও ও আমার সাথেই ছিল। আমার ছেলে এখানে ক্যামব্রিয়ান স্কুলে পড়ে তাই ও এখানেই বেশি থাকে।