ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা তৈমুর আলম খন্দকার।
আলোচিত এই রাজনৈতিক নেতার সম্পদের পরিমাণ দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে আট গুণ। তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৬৬ গুণেরও বেশি।
শুধু তাই নয়, এর মধ্যে একটি মাইক্রোবাসের মালিকও হয়েছেন তার স্ত্রী গৃহিনী হালিমা ফারজানা।
নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে কমিশনে জমা দেওয়া তৈমুর আলমের হলফনামা বিশ্লেষণে এসব জানা গেছে।
দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তৈমুর আলম খন্দকার।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি তাকে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী তৈমুর আলমের কাছে তখন নগদ ৫ লাখ টাকা ছাড়া অস্থাবর কোনো সম্পদ ছিল না।
কিন্তু মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে সেই সম্পদের পরিমাণ ৮ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এর মধ্যে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০২ টাকা নগদ এবং ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা ব্যাংকে জমা রয়েছে বলে হলফনামায় দেখিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া দুই বছর আগে তার কাছে সোনা ছিল ৫ ভরি। যা তিনি উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন।
উপহারে পাওয়া আরও ১১ ভরি মিলিয়ে বর্তমানে তার কাছে সোনা আছে ১৬ ভরি। যার মূল্য তিনি হলফনামায় দেখাননি।
দুই বছর আগে তৈমুর আলমের স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা ছিল মাত্র ২ লাখ। এছাড়া আর কোনো অস্থাবর সম্পদ ছিল না তার নামে।
বর্তমানে স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩৭২ টাকা রয়েছে। যা আগের তুলনায় ৬৬ গুণেরও বেশি।
এদিকে, দুই বছর আগে তার স্ত্রীর কোনো গাড়ি না থাকলেও এবার একটি মাইক্রোবাসও (নোয়া) তার অস্থাবর সম্পদের তালিকায় দেখিয়েছেন তৈমুর।
তবে, দুই বছর আগের ১২ ভরি সোনা পরিমাণে এবারও একই আছে।
অস্থাবর সম্পদের তালিকায় নিজের ও স্ত্রীর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র থাকলেও প্রার্থী এসবের মূল্য উল্লেখ করেননি হলফনামায়।
তৈমুর আলমের কোনো ছেলে নেই; তার দুই কন্যার একজন আমেরিকা ও অন্যজন লন্ডন থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ২০১৮ সালেও সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর।
২০১৮ ও ২০২২ সালের হলফনামায় তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল শূন্য। তবে, এবার তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় তিনি দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩ টাকা।
অন্যদিকে, আইন পেশায় নিয়োজিত তৈমুর আলম খন্দকারের নিজের বাৎসরিক আয় ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৪৮ টাকা। যা ২ বছর আগে ছিল ৮ লাখ ১ হাজার ৬৪১ টাকা।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে তৈমুরের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের ৫ কাঠার একটি প্লট এবং ২৭৬ বর্গমিটারের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি রয়েছে। যা ২ বছর আগেও একই ছিল।
আগে যৌথভাবে ২০০ শতাংশ কৃষিজমির ২২ দশমিক ২২ শতাংশের অংশীদার ছিলেন তৃণমূল বিএনপির এ প্রার্থী।
এ ছাড়া ৩০ শতাংশ অকৃষি জমির ২২ দশমিক ২২ শতাংশ জমির অংশীদার ছিলেন; যা এবার হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি।
স্ত্রীর নামে ৭৪ দশমিক ৩৪ বর্গমিটারের স্পেস রয়েছে ঢাকার তোপখানা রোডে। যেখানে আগে ছিল ৩১৪ বর্গমিটারের একটি ফ্ল্যাট।
এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তৈমুর আলম।
তিনি বলেন, তাদের দুই মেয়ে ছাড়াও স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই বিদেশে রয়েছেন। তারাই তার (স্ত্রী) কাছে টাকা পাঠায়।
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিবের কোনো দেনা বা ঋণ নেই।
তার নামে বর্তমানে দশটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিত এবং বাকিগুলো বিচারাধীন বলে হলফনামা থেকে জানা গেছে। এর আগে তার বিরুদ্ধে আরও ২০টি মামলা ছিল।
যার মধ্যে পাঁচটি বিচারাধীন এবং কয়েকটি রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হয় এবং বাকিগুলো থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।